Advertisement
E-Paper

বিজেপিতে কড়া, সিপিএমে নরম—পন্থা শাসকের

সোমবার দুপুরে ব্লক অফিসের মূল ফটক থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হল আরামবাগের বিজেপি নেতা ও রাজ্য কমিটির সদস্য অসিত কুণ্ডু-সহ ৬ জনকে। অভিযোগ, এক কর্মীকে মারধরও করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১৬
ঝামেলা: মনোনয়ন জমা ঘিরে আরামবাগ ব্লক অফিসে তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

ঝামেলা: মনোনয়ন জমা ঘিরে আরামবাগ ব্লক অফিসে তৃণমূল কর্মীদের জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

মনোনয়ন পত্র তোলা বা জমা দেওয়া তো দূরের কথা, ব্লক অফিস বা মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে ঢুকতেই পারলেন না আরামবাগের বিজেপি নেতা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সোমবার দুপুরে ব্লক অফিসের মূল ফটক থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হল আরামবাগের বিজেপি নেতা ও রাজ্য কমিটির সদস্য অসিত কুণ্ডু-সহ ৬ জনকে। অভিযোগ, এক কর্মীকে মারধরও করা হয়েছে।

অভিযোগের তির অবশ্য ছুঁড়তে হয়নি কারও দিকে। দুপুর দেড়টা নাগাদ আরামবাগ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দী ব্লক অফিসে এলে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল কর্মীরা সংবাদ মাধ্যমের সামনেই চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, “বিজেপির চার জন ঢুকে পড়ছিল। তাদের তাড়াতে পেরেছি দাদা।”

কর্মীদের উচ্ছ্বাসে বিব্রত ব্লক সভাপতি বলেন, “ছিঃ তাড়াবেন কেন! আমাদের উন্নয়নের কথা বলে তাঁদের বোঝান।”

সোমবার ছিল ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেওয়ার প্রথম দিন। সকাল থেকেই আরামবাগ মহকুমাশাসকের অফিস এবং আরামবাগ ব্লক অফিস চত্বরে ছিল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভিড়। অভিযোগ, ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকলেও সকাল ৯ টা থেকেই মোটরবাইক নিয়ে জমায়েত হতে শুরু করেন শাসকদলের কর্মীরা। শুধু অফিস চত্বর নয়, রাস্তাতেও এমন ভিড় ছিল যে মনে হয় গোটা ব্লক অফিস ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।

বেলা পৌনে ১টা নাগাদ বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা ব্লক অফিসের দিকে আসতেই ‘কাজে’ নেমে পড়ে তৃণমূল। ব্লক অফিস পর্যন্ত পৌঁছতেই দেওয়া হয়নি বিজেপির চার সম্ভাব্য প্রার্থীকে। দেখা যায় মহকুমা হাসপাতালের সামনে থেকেই পিছন ফিরে দৌড়চ্ছেন আরান্ডি-১ পঞ্চায়েত এলাকার চার প্রার্থী ও তাঁদের প্রস্তাবকরা। হাসপাতালের মূল ফটকেই দেখা যায় অন্য বিজেপি কর্মীকে চুলের মুঠি ধরে চড় মারছেন বলুন্ডি গ্রামের তৃণমূল নেতারা। আর ঠিক তখনই হাত দশেক দূরে ব্লক অফিসের মূল ফটকে বিজেপি নেতা অসিত কুণ্ডুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন আরামবাগ শহরের তৃণমূল নেতারা।

অসিতবাবুর অভিযোগ, “নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। সমস্ত বিষয়টা নির্বাচন কমিশনকেও জানানো হচ্ছে।’’ বিজেপির জেলা পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী তিরোল গ্রামের শুভেন্দু কোলেকে আবার মহকুমাশাসকের অফিসে পৌঁছনোর আগে হুমকি দিয়ে ফেরত পাঠানো হয় বলে অভিযোগ।

তার আগে সকাল ১১টা নাগাদ সিপিএম জোনাল নেতা উত্তম সামন্ত ব্লক অফিসে আসেন নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণা পত্র নিতে। অভিযোগ, সে সময়ই তাঁকে ফিরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। প্রায় মিনিট পঁচিশ তাঁর পিছু পিছু চারজন তৃণমূল নেতাকেও ঘুরতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তমবাবুর বলেন, “কানের কাছে বার বার হুমকি দিচ্ছে। চোখ রাঙাচ্ছে। যা অবস্থা মনোনয়ন পত্র তুলতে দেবে কিনা সন্দেহ।” তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের কাজ তিনি মেটাতে পেরেছেন।

তা নিয়ে অবশ্য কথা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। শাসকদলের একাংশ জেলা নেতা বলছেন, ‘‘বিজেপিকে যে ভাবে আটকাতে হবে, সিপিএমকে সে ভাবে নয়।’’ তাদের খানিক নরম মনোভাবের কারণেই নাকি সিপিএম প্রার্থী কাজ মেটাতে পেরেছেন। স্বপন নন্দী অবশ্য বলেছেন, “কেউ কোথাও জমায়েত করেনি। যে যাঁর কাজ নিয়ে সরকারি দফতরে এসেছিলেন।’’

আরামবাগ বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য বলেন, “ব্লক অফিস চত্বরের মধ্যে কোনও অশান্তি হয়নি। বাইরে কিছু ঘটেছে কিনা জানি না। কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ধনেখালিতে আবার পুলিশের সামনেই মার খেলেন সিপিআই (এমএল) কর্মীরা। এ দিন বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র তুলতে গিয়েছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, সজল দে নামে এক কর্মীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়। অভিযোগ পুলিশের সাহায্য চাইলেও তা মেলেনি। মোবাইল ফেরত দিলেও দু’টি সিম কার্ড খুলে রেখেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য সজল অধিকারী বলেন, ‘‘আজ, মঙ্গলবার চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে দুপুর ১টা থেকে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ক্ষোভ করব। মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেব। পুলিশের উপর আস্থা নেই বলেই এসডিও অফিসে ফর্ম জমা দিতে চাইছি।’’ হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পাইনি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’’ তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব অবশ্য পুরো অভিযোগটাই উড়িয়ে দিয়েছেন।

Panchayat Poll Clash TMC BJP পঞ্চায়েত নির্বাচন আরামবাগ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy