Advertisement
E-Paper

ক্যান্সার আক্রান্তের পাশে সহকর্মীরা

শুধু বন্ধুত্বের টানেই পুরুলিয়ার এক প্রত্যন্ত গাঁয়ের ক্যান্সার আক্রান্ত সহকর্মী তরুণীকে সারিয়ে তুলছেন ওঁরা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫১
সহকর্মীদের সঙ্গে শিল্পা।  — নিজস্ব চিত্র

সহকর্মীদের সঙ্গে শিল্পা। — নিজস্ব চিত্র

শুধু বন্ধুত্বের টানেই পুরুলিয়ার এক প্রত্যন্ত গাঁয়ের ক্যান্সার আক্রান্ত সহকর্মী তরুণীকে সারিয়ে তুলছেন ওঁরা।

কলেজে পড়তে পড়তেই বছর দু’য়েক আগে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে নার্সের সহায়িকা (নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট) হিসেবে কাজ করতে চলে আসেন পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির কালিমাটি গ্রামের শিল্পা রায়। কাজের পাশাপাশি বিএ তৃতীয় বর্ষের পড়াও চলছিল পুরোদমে। তবে, থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছিলেন। গলার শিরা (গ্ল্যান্ড) ফুলছিল। কিন্তু তা যে রাতের ঘুম কেড়ে নেবে স্বপ্নেও ভাবেননি শিল্পা।

২০১৫ সালের গোড়ায় তাঁর গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। শ্রমজীবী হাসপাতালেই চিকিৎসা শুরু হয়। ওই বছরের মার্চে এবং ডিসেম্বরে দু’দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। তাতেও সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। পরবর্তী চিকিৎসা হয় ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে। জুলাই মাসে সেখানে অস্ত্রোপচার হয়। চাঁদা তুলে খরচ জুগিয়ে গিয়েছেন শিল্পার সহকর্মীরা। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন শিল্পা। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। নিজের কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে শিল্পার। বলেন, ‘‘ওঁরা পাশে না দাঁড়ালে কী হতো, জানি না।’’

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে শিল্পার একার পক্ষে এ লড়াই চালানো সম্ভব ছিল না। বাবা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। মা অসুস্থ। তা ছাড়া, গাঁয়ের চৌহদ্দি ছেড়ে তিনি বেরোননি বললেই চলে। তাঁর পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয় বহন করা ছিল কার্যত অসম্ভব। শ্রমজীবী হাসপাতালে শিল্পার চিকিৎসা হয়েছে নিখরচাতেই। কিন্তু কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা বা ওষুধ-পথ্যের খরচ জোগাবে কে? এগিয়ে আসেন সহকর্মীরাই। যাঁদের কেউ থাকেন সুন্দরবনে, কেউ হুগলি, কেউ পুরুলিয়ায়। সক‌লে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বন্ধুকে সুস্থ করে তুলতে নিজেরাই টাকা জোগাড় করবেন।

যেমন ভাবা তেমনই কাজ। সকলে মিলে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন চাঁদা তুলতে। নিজেরা চাঁদা দিয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, শ্রমজীবী স্কুলে পড়াতে আসা শিক্ষক বা পরিচিতদের কাছেও হাত পেতেছেন। এই ভাবে প্রায় এক লক্ষ টাকা তুলে ফেলেছেন। ভরসার হাত রেখেছেন বন্ধুর কাঁধে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছে‌ন। মেয়েগুলোর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েছেন হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসা সুবর্ণকান্তি রায়ের মতো ষাটোর্ধ্ব মানুষ। শিল্পাকে নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন।

সফল অস্ত্রোপচারের পরে শ্রমজীবীতে ফিরে এসেছেন শিল্পা। তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি বাঘমুণ্ডির ডাংডুং গ্রামের মানবী মাহাতো, গঙ্গাসাগরের ঝর্ণা মণ্ডল, কোন্নগরের সুস্মিতা দেবনাথ, সঙ্গীতা মিত্র, জাঙ্গিপাড়ার ঝুমা প্রামাণিকদের মতো শিল্পার সহকর্মীদের। হাসপাতালে নিজেদের ঘরে শিল্পাকে সারাক্ষণ আগলে রাখছেন তাঁরা।

হাসপাতালের তরফে শিল্পী ঘোষ বলেন, ‘‘সবাই মিলে একটা লক্ষ্য সামনে রেখে এগোলে অনেক কঠিন সমস্যাই যে ছোট বলে মনে হয়, মেয়েগুলো সেটাই প্রমাণ করেছে। অল্প কয়েক দিনেই পুরোপুরি সেরে উঠবে শিল্পা। কাজে ফিরবে।’’ আর ঝর্ণা, মানবীরা বলছেন‌, ‘‘এখানে একজোট হয়ে না থাকলে কখনও হয়তো এ ভাবে কারও পাশে দাঁড়ানোই হতো না! শিল্পার পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা খুব খুশি।’’

বন্ধুর সুস্থতায় একরাশ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে মেয়েগুলোর চোখেমুখে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy