মে মাসে ‘নির্মল’ হয়েছে বাগনান-১ ব্লক। অথচ, সেখানেই শৌচাগার না-মেলার গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ!
সম্প্রতি ওই ব্লকের বাইনান পঞ্চায়েতে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পের সমীক্ষায় গিয়ে চমকে যান সরকারি প্রতিনিধিরা। বহু গ্রামবাসী শৌচাগার হয়নি বলে তাঁদের কাছে নালিশ জানান। এ-ও জানান, পঞ্চায়েতে খোঁজ নিয়ে তাঁরা জেনেছেন, তাঁদের নামে বরাদ্দ টাকা উঠে গিয়েছে।
ওই প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে পুরো বিষয়টি জানানো হয় জেলা প্রশাসনকে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশমতো তদন্ত শুরু করেছেন বিডিও। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, দুর্নীতির বহর ঠিক কতটা, আগে তা যাচাই করা হচ্ছে। তারপরে যাঁরা জড়িত, চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত ৮০০ শৌচাগারের ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। কারা দোষী, তা নিয়ে চাপানউতোর শুধু হয়েছে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির।
‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে বিশেষ সামাজিক ও আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে যে সব উপভোক্তার নাম কেন্দ্র সরকারের তালিকায় রয়েছে, তাঁদের ন্যূনতম খরচে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। একটি শৌচাগার তৈরির খরচ ১০ হাজার ৯০০ টাকা। উপভোক্তাকে দিতে হচ্ছে ৯০০ টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে সরকার।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যে সব ব্লকে ৮০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়, সেই সব ব্লককে ‘নির্মল ব্লক’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেইমতো গত মে মাসে বাগনান-১ ব্লককেও ‘নির্মল’ ঘোষণা করা হয়। নথিপত্র বলছে, বাইনান পঞ্চায়েতে ২০১৪ সাল থেকে দফায় দফায় মোট ৮০০টি শৌচাগার তৈরি হয়েছে। শৌচাগার তৈরির দায়িত্বে যে সব ঠিকা সংস্থা ছিল, তাদের টাকাও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিন পনেরো আগে ওই পঞ্চায়েতে ‘মিশন নির্মল বাংলা’র প্রতিনিধিরা যেতেই দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। ওই প্রতিনিধিরা গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বিক্ষোভকারীরা জানান, তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁদের শৌচাগার হয়নি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এবং কাগজপত্র দেখেও ওই প্রতিনিধিরা নিশ্চিত হন, ওই পঞ্চায়েতে শৌচাগার তৈরির কাগজপত্রের হিসেবের সঙ্গে বাস্তবের গরমিল রয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে ওই প্রতিনিধিরা জেনেছেন, কোথাও একটি শৌচাগারকে দু’জনের নামে দেখিয়ে দু’বার টাকা তোলা হয়েছে। কোথাও শৌচাগার অসম্পূর্ণ, অথচ পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কোথাও আবার গ্রামবাসীর টাকা নিয়েও শৌচাগার করে দেওয়া হয়নি।
কী বলছে পঞ্চায়েত সমিতি? সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সমীর সামন্ত বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব হল পঞ্চায়েত প্রধান এবং নির্মাণ সহায়কের কাছ থেকে সব কাগজপত্র ঠিকঠাক হয়ে এলে ঠিকা সংস্থার পাওনা মিটিয়ে দেওয়া। তা-ই করা হয়েছে। কাজ না-হওয়ার দায় পঞ্চায়েতের।’’ পক্ষান্তরে বাইনান পঞ্চায়েতের প্রধান শাহানা বেগমের পাল্টা দাবি, ‘‘কাজটি করানো হয় সমিতি এবং ব্লক থেকে। এখন পঞ্চায়েতের ঘাড়ে দোষ চাপালে হবে না। তদন্তেই প্রমাণিত হবে কারা দোষী।’’
সেই তদন্তই দ্রুত হোক, চাইছেন গ্রামবাসীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy