Advertisement
E-Paper

হাল ফিরুক বাউড়িয়া বাজারের

বর্ষাকাল নয়। তবুও কাউকে দেখা যাচ্ছে জুতো হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে, কেউবা যাচ্ছেন প্যান্ট গুটিয়ে। যে কোনও ঋতুতে গেলে এই দৃশ্য দেখা যাবে বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার ছোট গেট বাজারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:০৪
জল-কাদার মধ্যে ভাবে‌ই বসে বাজার। নিজস্ব চিত্র।

জল-কাদার মধ্যে ভাবে‌ই বসে বাজার। নিজস্ব চিত্র।

বর্ষাকাল নয়। তবুও কাউকে দেখা যাচ্ছে জুতো হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে, কেউবা যাচ্ছেন প্যান্ট গুটিয়ে। যে কোনও ঋতুতে গেলে এই দৃশ্য দেখা যাবে বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার ছোট গেট বাজারে।

শহরের কেন্দ্রেই বাজারটি বসে খোলা জায়গায়। কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন আসেন এই বাজারে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মাথার উপরে কোনও পাকা ছাউনি নেই। নিজেদের মতো করে ত্রিপল টাঙিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। একদিন সকালে গিয়ে দেখা গেল, মাছ কাটার জলে থই থই করছে পুরো চত্বর। নালা থাকলেও নোংরা জলে ভর্তি। সেই জল ডিঙিয়েই বাজার করতে আসছেন সকলেই।

মাছ বাজারের এই জল নিয়ে রোজই ঝগড়া লেগে থাকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সব্জি বিক্রেতাদের। মাছ ব্যবসায়ীদের দাবি, জল যদি চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলে আর জমে থাকে না। সব্জি ব্যবসায়ীদের পাল্টা দাবি, ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের চত্বরেই চলে আসবে নোংরা জল। তাতে তাঁদের ব্যবসা করতে অসুবিধা হবে। শেষ পর্যন্ত সাময়িক একটা রফা করেছেন মাছের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানেই জল রাখছেন। প্রতিদিন সকালে দু’জন ঝাড়ুদার এসে সেই নোংরা জল তুলে বাইরে ফেলে দেন। এর জন্য প্রতিটি মাছ ব্যবসায়ী ২০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেন তাঁদের।

বর্ষায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয় নয়। তখন মাছ বাজারে ঢুকতে পারেন না ক্রেতারা। তাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁদের হাতে মাছ তুলে দিয়ে টাকা নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। দূর থেকে পছন্দ মতো মাছ কি কেনা সম্ভব? ব্যবসায়ী ভবেন্দু শাসমল, সমর পাড়ুই বললেন, ‘‘ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের সেই বিশ্বাসের সম্পর্ক আছে। আমরা জানি কোন ক্রেতা কী পছন্দ করেন। সেই মাছ আমরা তাঁদের দিয়ে আসি।’’ কিন্তু এই সব স্থায়ী সমাধান নয় বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই। তাঁদের দাবি, বাজার ঠিক মতো সংস্কার করা না হলে এই সমস্যা কোনও দিনই মিটবে না।

সমস্যা যে শুধু বাজারের ভিতরের, তা নয়। কেন না বাজারের যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হয় পাশে একটি মাঠে। ওই মাঠের পাশ দিয়ে গেলে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যেতে হয়। সেই বর্জ্য পুরসভার পক্ষ থেকে তুলে নিয়ে অন্য জায়গায় ফেলা হয় না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। যদিও পুরসভার দাবি, নিয়মিত না হলেও বর্জ্য তুলে ফেলা হয়।

এত সমস্যা থাকালেও বাউড়িয়ার সেরা বাজার হিসেবে এটিকেই মনে করেন বাসিন্দারা। তূষারকান্তি মণ্ডল, লক্ষণ সাঁতরা বলেন, ‘‘এখানে কম দামে ভাল জিনিস মেলে। তাই আমরা এখানেই আসি।’’ কিন্তু এটি এখানকার আদি বাজার নয়। তা ছিল এখান থেকে কিছুটা দূরে। সেখানে জল নিকাশির ব্যবস্থা ছিল। ছিল ছাউনি, আলোও। ব্যবসায়ীরা ওখানে বেলা ১১টা পর্যন্ত বসতেন। পরে তাঁরা ছোট গেট বাজারে উঠে আসতেন এবং বাড়তি মাছ, সব্জি কম দামে তাঁরা বিক্রি করতেন। বেলা পর্যন্ত চলা সস্তার বাজারই পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বছরকুড়ি আগে আদি বাজারটি উঠে যায়। আদি বাজারটি ছিল একটি চটকলের অধীনে। সংস্থার পক্ষে মৃণ্ময় শিকদার বলেন, ‘‘পুরনো বাজারটিকে ফের সাজিয়ে নতুন করে শুরু করা যায়। এ ব্যাপারে পুরসভাকেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব নিতে হবে।’’

ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা পুরনো জায়গায় যাবেন না। নতুন জায়গাতেই সব রকম সুবিধা করে দিতে হবে। জমিটি ইদগা ময়দান নামে পরিচিত। এই জমিও বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি শিল্পসংস্থার অধীনে আছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পুর কর্তৃপক্ষ সব মহলের সঙ্গে কথা বলে যদি বাজার সংস্কার করে তাঁরা সহায়তা করবেন। বাজারটি উলুবেড়িয়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। কাউন্সিলর স্বপ্না সেন বলেন, ‘‘যে শিল্পসংস্থার হাতে জমিটি আছে শীঘ্রই তাঁদের এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বাজার সাজানোর পরিকল্পনা করা হবে।’’

Bauria Market Administration Worst Condition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy