Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অস্থায়ী গুমটি তোলা নিয়ে রে‌ল-পুরসভা চাপানউতোর

রেললাইনের ধারে ফাঁকা জমিতে থাকা কয়েকটি গুমটি ভেঙে দিল রেল। সেখান থেকে দু’জন হকারকে আটক করা হয়েছে। বুধবার এই ঘটনা ঘটে শ্রীরামপুর পুরভবনের সামনে। এই নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রেলের চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

শ্রীরামপুর স্টেশন চত্বর থেকে সরানো হচ্ছে অস্থায়ী দোকানপাট। — প্রকাশ পাল।

শ্রীরামপুর স্টেশন চত্বর থেকে সরানো হচ্ছে অস্থায়ী দোকানপাট। — প্রকাশ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৬
Share: Save:

রেললাইনের ধারে ফাঁকা জমিতে থাকা কয়েকটি গুমটি ভেঙে দিল রেল। সেখান থেকে দু’জন হকারকে আটক করা হয়েছে। বুধবার এই ঘটনা ঘটে শ্রীরামপুর পুরভবনের সামনে। এই নিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রেলের চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

কিন্তু কেন? শ্রীরামপুর পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরভবনের প্রবেশ পথে পাঁচিল ও গেট জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। সেই কারণে পাঁচিল-সহ গেট নতুন করে করার পরিকল্পনা করা হয়। পুরনো পাঁচিল ভেঙে ফেলা হয়। পাঁচিলের ধার ঘেঁষে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান ছিল। সেগুল‌ি তুলে রাস্তার উল্টোদিকে ‘পুনর্বাসনের’ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ওই সব দোকানঘরের জন্য ঐতিহ্যবাহী ভবনের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছিল বলে দাবি পুরসভার। তাই গেটের সামনে থেকে গুটিকয়েক হকারকে তুলে পাশেই রেল লাইনের ধারে ফাঁকা জমিতে গুমটি করে দিচ্ছিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। এ দিন সকালে অবশ্য আরপিএফ কর্মীরা সেখানে এসে গুমটির জন্য বাঁধা বাঁশের কাঠামো খুলে ফেলেন।

পুরসভার পূর্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল উত্তম রায়ের দাবি, ‘‘পুরভবনের চেহারা সুন্দর করার জন্য কয়েকটা গুমটি সরানো হয়েছে। জায়গাটা পুরসভার। পুরসভাই জায়গাটি দেখভাল করে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আরপিএফের এই অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা চিঠি দেব। এই কাজে নিশ্চয়ই কারও ইন্ধন রয়েছে।’’ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি চতুর্বেদি বলেন, ‘‘কোথায় কী হয়েছে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’’

চাপানউতোর যাই থাক নিত্যযাত্রীরা এই কাজকে সমর্থন করেছে। শ্রীরামপুর স্টেশন চত্বর থেকে রেল লাইন বরাবর হকারদের রমরমা। প্ল্যাটফর্মের উপর হকারদের দাপটে যাত্রীদের হাঁটার উপায় থাকে না। পূর্ব দিকে স্টেশনে যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে রয়েছে হরেক রকমের দোকানপাট। সকাল সন্ধ্যা ব্যস্ত সময়ে স্টেশনে যাতায়াত করতে নাভিঃশ্বাস ওঠে সাধারণ মানুষের। পশ্চিম দিকেও একই পরিস্থিতি হয়। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, আসল সমস্যা সমাধানে রেলের কোনও উদ্যোগ নেই। এক নিত্যযাত্রীর কথায়, ‘‘স্টেশনে আসার পথে বি পি দে স্ট্রিট, নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউ, রাজেন্দ্রবাগ রোড সব জায়গাতেই হকারদের রমরমা। ফুটপাথ চুরি হয়ে গিয়েছে। স্টেশন চত্বরের পাশাপাশি ওই সব রাস্তাতেও সাধারণ মানুষের হাঁটার জায়গা অত্যন্ত জরুরি।’’

কিন্তু পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই জমি আদপেই রেলের নয়। আরপিএফ জোর করে গুমটি সরিয়েছে। আরপিএফ সূত্রের খবর, রেলের জমিতে ওই গুমটিগুলি বসানো হচ্ছিল। তাই সেগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রীরামপুরে রেল ও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নতুন‌ নয়। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামপুর স্টেশনে একটি সাবওয়ে করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ওই প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পের শিলান্যাস করেন স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজ শুরুও হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তা গুটিয়ে যায়। তৃণমূল শিবিরের ক্ষোভ, কেন্দ্র ইচ্ছে করেই ওই প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সব মিলিয়ে হকার উচ্ছেদ নিয়ে বুধবার দিনভর সরগরম রইল শ্রীরামপুর পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Confusion Small Shops Roadside Eviction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE