Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুর্গ উদ্ধারই পাখির চোখ কংগ্রেসের

পিঠোপিঠি দুই কেন্দ্র। একটি চাঁপদানি। অন্যটি শ্রীরামপুর। দু’জায়গাতেই জোটের হাত ধরে শাসক দলকে হটাতে মরিয়া কংগ্রেস। গঙ্গাপাড়ের ঐতিহাসিক শহর শ্রীরামপুর বরাবরই কংগ্রেসের দুর্গ ছিল।

প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

পিঠোপিঠি দুই কেন্দ্র। একটি চাঁপদানি। অন্যটি শ্রীরামপুর। দু’জায়গাতেই জোটের হাত ধরে শাসক দলকে হটাতে মরিয়া কংগ্রেস।

গঙ্গাপাড়ের ঐতিহাসিক শহর শ্রীরামপুর বরাবরই কংগ্রেসের দুর্গ ছিল। বামেদের প্রতিভূ হিসাবে সিপিআই ভোটে লড়লেও কার্যত দুর্গে কোনও আঘাতই হানতে পারেনি তারা। যা পেরেছে তৃণমূল। গত কয়েক বছর ধরেই দুর্গের দখল তাদের হাতে। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে তার নিজের গড়ে ফিরিয়ে দিতে কোমর বেঁধেছে বামেরাও।

চাঁপদানিতে কংগ্রেস প্রার্থী, জোটের অন্যতম প্রবক্তা আব্দুল মান্নান। শ্রীরামপুরে কংগ্রেসের বাজি শুভঙ্কর সরকার, যিনি এআইসিসি সম্পাদক। বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে শুরুর দিকে আপত্তি থাকলেও এখন তিনি সমানে-সমানে টক্কর দিচ্ছেন তৃণমূলের চিকিৎসক-প্রার্থী সুদীপ্ত রায়ের সঙ্গে। শ্রীরামপুরকে কংগ্রেসের কাছে ফিরিয়ে দিতে তিনি এতটাই মরিয়া যে দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এখানে এসে সভা করেছেন শুভঙ্করের সমর্থনে।

পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। আগের বার এখানে তারা জিতলেও পরিরর্তিত পরিস্থিতি (সারদা, নারদ) এবং কংগ্রেস সভানেত্রীর সভা তাদের যে অস্বস্তিতে ফেলেছে তার প্রমাণ সনিয়ার সভার পরদিনই সভা করেন তৃণমূল নেত্রী।

অথচ শাসক দল ভেবেছিল, ধারে-ভারে দলের বিদায়ী বিধায়ক সুদীপ্তবাবুর ধারে কাছে কেউ আসতে পারবেন না। ২০০৯ সালে তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক রত্না দে নাগ হুগলি কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন। তাঁর ছেড়ে যাওয়া জায়গায় উপ-নির্বাচনে জেতেন সুদীপ্তবাবু। ২০১১ সালেও হাসতে-হাসতে জেতেন। আইএমএ-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি সুদীপ্তবাবু শ্রীরামপুরবাসীর কাছে ‘ডাক্তারবাবু’ হিসেবে পরিচিত। তাঁর ভাবমূর্তি নিয়ে বিশেষ প্রশ্ন ওঠেনি। ওঠেনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগও।

কিন্তু তাতে কী! সারদা থেকে নারদ, বিবেকানন্দ উড়ালপুল নিয়ে শাসক দলের দুর্নীতি প্রসঙ্গে সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৃণমূলকে বিঁধছে কংগ্রেস-বাম এবং বিজেপিও।

তবে দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদের প্রচারকে পাত্তা না দিয়ে তৃণমূলের দাবি, মানুষ যা চায় সেটাই করেছে তারা— উন্নয়ন। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে নারদ নিয়ে যে ভাবে একের পর এক নানা মন্তব্য করে তৃণমূল নেত্রী বিপাকে এবং দুর্নীতি নিয়ে সুর চড়াচ্ছে বিরোধী জোট, তাতে এ ছাড়া তৃণমূলের কোনও পথ নেই।

‘ডাক্তারবাবু’ অবশ্য মনে করছেন, তাঁর রক্ষণ জমাট। মনে করিয়ে দেন, পাঁচ বছর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালকে ঢেলে সাজার। হাসপাতালটি এখন সুপার স্পেশালিটিতে উন্নীত হচ্ছে। বললেন, ‘‘এলাকার মানুষকে আর কলকাতায় ছুটতে হবে না’’। আরও জানান, তাঁর আমলে রিষড়া সেবাসদনের যাবতীয় অনিয়ম দূর করে নতুন ভাবে চালানো হচ্ছে। বটতলার মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আলো বসেছে। রাস্তাঘাট, জলের সমস্যা দূর হয়েছে। স্পিনিং মিলের অচলাবস্থা ঘুচিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আর এখানেই তাঁকে প্রশ্ন বিরোধীদের। তাঁদের অভিযোগ, কর্মসংস্থানের প্রশ্নে এই এলাকা ক্রমশই পিছিয়েছে। বিধানসভা কেন্দ্রের তিনটি চটকলের মধ্যে দু’টি বন্ধ ছিল। তার মধ্যে একটি শুক্রবার ‘ইন্ডিয়া চটকল) খুলেছে। জোটপ্রার্থীর দাবি, ‘‘চটকলের হাল ফেরাতে স্থানীয় বিধায়ক আদৌ উদ্যোগী হননি। বিধানসভায় গলা তোলেননি। মদ তৈরির কারখানা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজ হারিয়েছেন কয়েকশো মানুষ।’’ শতাঁর কথায়, ‘‘বিধায়ক হলে রাস্তায় আলো লাগানো বা নর্দমা পরিষ্কারের চেয়েও আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান তৈরি বা শিল্পের জন্য উদ্যোগী হওয়া।’’

২০১৪-র লোকসভায় এই কেন্দ্রে বিজেপি শাসক দলকে পিছনে ফেলেছিল। সেই হিসেব এবং শাসক দলের দুর্নীতি ও অপশাসন নিয়ে সরব বিজেপি প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য।

এখন দেখার জল কোনদিকে গড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Srirampur assembly election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE