Advertisement
E-Paper

সিসিটিভি-র টাকা দেবে ছাত্ররা, বিতর্ক

কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, ফর্ম পূরণ করতে না দেওয়ার কথা কাউকেই বলা হয়নি। টাকা দিতে অপারগ এই মর্মে ওই পড়ুয়াদের থেকে লিখিত আবেদন নিয়ে ওই টাকা ছাড় দেওয়া হয়।

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫১
 প্রতিবাদ: স্কুলের সামনে জটলা ছাত্রদের। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ: স্কুলের সামনে জটলা ছাত্রদের। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের বাৎসরিক ফি বেঁধে দিয়েছে সরকার। অথচ স্কুলে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) কেনার জন্য পড়ুয়াদের থেকে টাকা জমা নেওয়ার অভিযোগ উঠল চুঁচুড়ার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যা‌লয়ের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়। অভিযোগ, যে যে পড়ুয়া সেই টাকা দিতে অসম্মত হয়েছে, তাদের অ্যাডমিট কার্ডের জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া হবে না বলেও স্কুলের তরফে জানানো হয়। প্রতিবাদে বুধবার চুঁচুড়ার কাপাসডাঙা সতীন সেন বিদ্যাপীঠ নামে ওই স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।

কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, ফর্ম পূরণ করতে না দেওয়ার কথা কাউকেই বলা হয়নি। টাকা দিতে অপারগ এই মর্মে ওই পড়ুয়াদের থেকে লিখিত আবেদন নিয়ে ওই টাকা ছাড় দেওয়া হয়।

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সুব্রত সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি।

বিষয়টি শুনে ক্ষুব্ধ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, এ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের থেকে টাকা নেওয়া নিয়মবিরুদ্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে কোনও স্কুল পড়ুয়াদের থেকে টাকা নিতে পারে না। টাকা ফেরত দিতে হবে। নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা বা প্রয়োজন‌ থাকলে স্কুল তা আমাদের দফতরে জানাক। নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে।’’

বিদ্যা‌লয় সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে স্কুলে সিসিটিভি লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়, পড়ুয়াদের থেকে ওই টাকা তোলা হবে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের ১৫০ টাকা এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ২৫০ টাকা ধার্য করা হয়। কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ওই টাকা দিয়েও দেয়।

সমস্যা শুরু হয় বুধবার। এ দিন উচ্চ মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডের জন্য ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়া চলছিল। অভিযোগ, সিসিটিভি-র টাকা বাবদ ২৫০ টাকা নিয়ে তবেই ফর্ম পূরণ করানো হচ্ছিল‌।

দুপুরে কয়েক জন ছাত্র জানায়, রেজিস্ট্রেশন ফি বাদে আর কোনও টাকা তারা দেবে না। ওই পড়ুয়াদের দাবি, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কথা শুনতে চাননি। এক ছাত্র বলে, ‘‘আমার বাবা রাজমিস্ত্রি। বাড়তি টাকা দিতে পারব না বলায় স্কুলের তরফে জানানো হয়, ফর্ম পূরণ করা যাবে না।’’ অন্য এক ছাত্রের বক্তব্য, ‘‘উন্নয়ন ফি বাবদ টাকা ভর্তির সময়ে নেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আর কোনও টাকা দিতে হয় না। কোনও স্কুলেই দিতে হচ্ছে না। আমরা কেন দেব?’’

স্কুলের টিচার ইন-চার্জ মহীতোষ চন্দের বক্তব্য, ‘‘সিসিটিভি-র টাকা জমা না দিলে ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া হবে না, আদপেই এমন বলা হয়নি।’’ তিনি বলেন, ‘‘৯৫ জন উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। অধিকাংশই ওই টাকা দিয়েছে। করণিকের মুখে শুনলাম, অল্প কয়েক জন অভিযোগ করছে। ওরা কিন্তু আমাকে জানায়নি। না পারলে টাকা নেওয়া হবে কেন? পরীক্ষায় বসা থেকে আটকানোর প্রশ্নই নেই।’’

কিন্তু স্কুল কি এ ভাবে টাকা নিতে পারে? টিচার ইন-চার্জের যুক্তি, ‘‘এই খাতে সরকারি সাহায্য মেলে না। সেপ্টেম্বর মাসে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’

জেলার বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, এ ভাবে টাকা নেওয়া যায় না। সদর মহকুমার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমরা সিসিটিভি লাগিয়েছি এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রীর এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায়। কেউ অনুদান দিলে আলাদা কথা, ছাত্রছাত্রীদের থেকে এই খাতে টাকা চাওয়া যায় না।’’ চন্দননগর মহকুমার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৪০ টাকা ভর্তির সময়েই নিয়ে নেওয়া হয়। এতে সব খরচ চালানো মুশকিল হলেও এর বাইরে টাকা নেওয়া যায় না।’’ শ্রীরামপুর মহকুমার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কথায়, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের উপরে বাড়তি টাকা চাপিয়ে দেওয়ার কথা নয়। সিসিটিভির জন্য ওঁরা তো জন-প্রতিনিধির কাছে আবেদন‌ জানাতে পারতেন।’’

Controversy School CCTV
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy