Advertisement
E-Paper

জমজমাট পাড়া এখন পুরো নিস্তব্ধ

সত্তর বছর বয়স হল। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাসের চোখরাঙানিতে আমার গোটা পাড়ার চেহারাটাই বদলে গেল।

 অশোক সাউ (চন্দননগরের প্রাক্তন মেয়র ও বিধায়ক। উর্দিবাজারের বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০৩:০০
সুনসান উর্দিবাজারের রথতলা। ছবি: তাপস ঘোষ

সুনসান উর্দিবাজারের রথতলা। ছবি: তাপস ঘোষ

সব দেখেশুনে অদ্ভুত লাগছে!

মাস দেড়েক আগেও ফুটবল লিগে কুটির মাঠে ঠাসা লোক দেখেছি। এখন সব ফাঁকা। মনে হচ্ছে যেন কত যুগ আগের দেখা!

গঙ্গার ধারে আমার বাড়ি। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত গঙ্গার ঘাটে কত লোককে আসতে দেখতাম। এখন শুধু প্রশাসনের লোকজনের দৌড়ঝাঁপ দেখি। পাড়ার রকের আড্ডাটাও আর চোখে পড়ছে না।

সত্তর বছর বয়স হল। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাসের চোখরাঙানিতে আমার গোটা পাড়ার চেহারাটাই বদলে গেল। এই বয়সে এমন অভিজ্ঞতা হবে, কল্পনাও করিনি। পাড়ার কয়েকজনের করোনা

সংক্রমণ হয়েছে। প্লাইউড দিয়ে গোটা এলাকা ঘিরে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। যাতে কেউ বেরোতে বা ঢুকতে না-পারেন। ভালই হয়েছে। হয়তো, এটা জরুরিও ছিল।

দু’দিন ধরে এই নিশ্ছিদ্র ঘেরাটোপে আছি। বুঝতে পারছি, এতেই অনেকে হাঁফিয়ে উঠেছেন। জমজমাট এলাকায় এমন নিস্তব্ধতা কারই বা ভাল লাগে! খাঁচায় বন্দি পাখি যেমন আকাশে ওড়ার জন্য ছটফট করে, তেমনই অবস্থা অনেকের। অর্থনৈতিক ভাবেও মানুষ সমস্যায়।

গোটা বিশ্ব এখন দিশাহারা। করোনার ছোবল থেকে বাঁচতে সবাই বন্দি। একটানা ৪৭ দিন ধরে চলছে লকডাউন। সমাজের কাজে ছোট থেকেই যুক্ত থেকেছি। দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। সব সময় জেনে এসেছি মানুষের কাছে, মানুষের পাশে থাকতে হবে। মানুষের ভালর জন্যই যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি।

করোনায় সংক্রমিত লোকজনকে রাজ্য প্রশাসন হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। তাঁদের সংস্পর্শে আসায় কিছু মানুষ কোয়রান্টিনে রয়েছেন। চন্দননগরের প্রশাসন সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই অতিমারির বিরুদ্ধে। কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, সে জন্য সংক্রমিত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উর্দিবাজার এলাকার বাসিন্দাদের নির্দিষ্ট কিছু ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁরা প্রয়োজনীয় জিনিস অর্ডার দিতে পারছেন এবং হোম বা পাড়া ডেলিভারির মাধ্যমে সেগুলি কিনতে পারছেন।

চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সমাজসেবী সবাই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতে। চন্দননগরবাসী হিসেবে তাঁদের কুর্নিশ জানাই। প্রচারের মাধ্যমে উর্দিবাজার তথা এই শহরের মানুষকে সচেতন করার কাজ অব্যাহত। মানুষকেও বুঝতে হবে, অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দায়িত্ব শুধু রাজ্য সরকারের নয়। এই লড়াইয়ের সাফল্য নির্ভর করছে সাধারণ মানুষের সচেতনতার উপরে। সে জন্যই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরনো, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ নিরাপত্তাজনিত সমস্ত বিধি মেনে চলা উচিত। গুজব ছড়ানো থেকেও বিরত থাকা উচিত।

আমার জমজমাট পাড়াকে আবার আগের অবস্থায় দেখতে চাই। যেখানে কোনও করোনার ছায়া থাকবে না। সে সুদিনের অপেক্ষায় এখন না হয় একটু কষ্ট করি।

Coronavirus Urdibazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy