ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম উলুবেড়িয়া বাজারের একটি দোকানে। ছবি: সুব্রত জানা।
কোথায় সেই জনপ্লাবন! কোথায় সেই ঘর্মাক্ত কলেবর বিক্রেতা! নেই সেই চেনা হাঁকডাকও।
‘‘বসে বসেই দিন কাটল’’—পুজোর আগের শেষ রবিবারে খেদ উলুবেড়িয়া বাজারের এক বস্ত্র বিক্রেতার।
করোনা আবহেও কলকাতার নিউ মার্কেট-সহ কিছু বাজারে পুজোর কেনাকাটার ভিড় উপচে পড়ছে। দুই জেলার ছবিটা অবশ্য আলাদা। গত কয়েকদিন তো বটেই, পুজোর আগের শেষ রবিবারেও বাজারগুলিতে ভিড় কার্যত উধাও। চিরকালের চেনা ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে। করোনা থাবা বসিয়েছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের কেনাকাটার আনন্দে।
বিকেল চারটে পর্যন্ত উলুবেড়িয়া বাজারের বস্ত্র বিপণিগুলিতে ক্রেতা নামমাত্র। রাস্তাঘাটও ফাঁকা। এক বস্ত্র কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘অন্যান্য বছর পুজোর আগের শেষ রবিবারে খাওয়া-দাওয়ার সময় থাকত না। এ বার কেনাকাটা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। লকডাউনে প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছেন। হাতে পয়সা নেই। কিনবেন কী করে? অনেকে ভিড় এড়াতে দোকানে না এসে অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। এ বার পুজোর বাজার ভাল যাচ্ছে না।’’
পুজোর একমাস সাধারণত সব ধরনের ব্যবসাই চুটিয়ে চলে। এ বার অতিমারিতে লকডাউনের গোড়া থেকেই পুজোর বাজার নিয়ে চিন্তায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। লকডাউন ওঠার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো পরিস্থিতি অনুকূল হবে। তা হয়নি। বাগনানের বস্ত্র ব্যবসায়ী শেখ সইদুলের গলায় সেই খেদ, ‘‘দেনা করে মাল তুলেছি। বেচাকেনা করে শোধ করব ভেবেছিলাম। এখন দেখছি কারবারে ক্ষতি হবে। কী করে মহাজনদের টাকা মেটাব, ভাবতে পারছি না।’’
রাতের দিকে হুগলি শহরাঞ্চলের বড় বাজারগুলিতে কিছুটা ভিড় বাড়লেও আগের বছরগুলোর মতো নয়। দুপুরে চন্দননগরের জুতোর দোকান, জামাকাপড় বা ঝুটো গয়নার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনা। বিক্রিবাটা ৫০-৬০% কমেছে বলে জানিয়েছেন আরামবাগের ব্যবসায়ীরা।
আরামবাগ শহরের বস্ত্র ব্যবসায়ী নবকুমার মণ্ডলের কথায়, ‘‘অন্য বছর পুজোর আগের দু’সপ্তাহের প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। রবিবার ৫০ হাজার টাকা বা তারও বেশি হয়েছে। এ বার গড়ে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।” পি সি সেন রোডের বস্ত্র ব্যবসায়ী শক্তিসাধন গুপ্ত বলেন, ‘‘মালের সরবরাহ নেই। বিক্রি কমেছে ২০-২৫ শতাংশ।’’
সেলুন এবং বিউটি পার্লারগুলির হালও তথৈবচ। আরামবাগ হাসপাতাল রোডের সেলুন মালিক সুপ্রিয় দত্তের আক্ষেপ, ‘‘প্রতিদিন ২০-২৫ জনের বেশি আসছেন না। অন্যবার সপ্তাহ দুয়েক ধরে প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ জনের ভিড় হয়েছে।’’
কেনাকাটা করতে বেরিয়ে খাওয়া-দাওয়া, হইচই, সিনেমা দেখা— সার্বিক আনন্দটাই এ বার গায়েব। ১৫ অক্টোবর থেকে সিনেমা হল খুলেছে। কিন্তু দর্শক কোথায়? রবিবার ছুটির দিনেও কার্যত মাছি তাড়াল দুই জেলার সিনেমা হলগুলি। অথচ, সুরক্ষা-বিধি রয়েছে সব হলেই। মাস্কের ব্যবস্থা হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে থার্মাল স্ক্রিনিংও চলছে। কিন্তু দর্শক নেই।
বাগনানের নুন্টিয়ার হল-মালিক শুভময় মাইতির আক্ষেপ, ‘‘ভেবেছিলাম, দর্শক মুখিয়ে আছেন হলে ঢোকার জন্য। কিন্তু দেখছি, প্রতি শোয়ে ৫-৬ জন করে দর্শক হলে ঢুকছেন।’’ আন্দুলের একটি হলের কর্ণধার তথা ইমপা-র ডিস্ট্রিবিউশন শাখার চেয়ারম্যান সরোজ মুখোপাধ্যায় অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, প্রতি বছর পুজোর আগে দিন পনেরো হলে দর্শক কম আসেন। এ বছর করোনার জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তার উপরে নতুন ছবি নেই। আশা করি, সপ্তমীর দিন থেকে হলগুলি মেজাজে ফিরবে।
আরামবাগের এক সিনেমা হল মালিক বলেন, ‘‘আমাদের বেশিরভাগ দর্শক স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। স্কুল-কলেজ বন্ধ। ওরাও আসছে না। প্রতিদিন তিনটি শো-পিছু ১২-১৫ জনের বেশি দর্শক পাচ্ছি না। অথচ, হলে আসনসংখ্যা প্রায় ৯১৫। ৫০ শতাংশ দর্শকও হচ্ছে না।’’ একই রকম আক্ষেপ অন্য হল-মালিকদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy