Advertisement
E-Paper

কাণ্ডজ্ঞানহীন ভিড়ে পড়ল লাঠির বাড়ি

সোমবার রাত থেকেই বৈদ্যবাটী,  শেওড়াফুলি, শ্রীরামপুরের নানা প্রান্তে বাহিনী নিয়ে পথে নামেন চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি-২ বিজয়কৃষ্ণ মণ্ডল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০০:৫২
জনতাকে সরাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা

জনতাকে সরাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা

প্রাণঘাতী ভাইরাসের কবল এড়াতে মঙ্গলবার ছিল ‘লকডাউন’-এর দ্বিতীয় দিন। কিন্তু সকালে হুগলির অনেক জায়গাতেই পাড়ার মোড়ে, চায়ের দোকানে আর পাঁচটা দিনের মতোই ভিড় জমল। বাড়ির দরজায় পৌঁছে দিতে হন্যে হয়ে তাঁদের পিছনে ছুটল পুলিশ। অবাধ্য জনতাকে ‘সবক’ শেখাতে কোথাও কোথাও কড়াও হতে হল পুলিশকে। পড়ল লাঠির ঘা। দিনের শেষে পুলিশের এই ‘তৎপরতায়’ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক সচেতন মানুষই।

সোমবার রাত থেকেই বৈদ্যবাটী, শেওড়াফুলি, শ্রীরামপুরের নানা প্রান্তে বাহিনী নিয়ে পথে নামেন চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি-২ বিজয়কৃষ্ণ মণ্ডল। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে দেখা গেল মাহেশে জিটি রোড থেকে বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে। লাঠি উঁচিয়ে অবৈধ জমায়েত ভেঙে দেওয়া হল। মোটরবাইকে চেপে ঘুরতে বেরনো যুবকের পায়ে লাঠির বাড়িও পড়ল। চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুঁচুড়া— সর্বত্রই অকারণে রাস্তায় বের হওয়া মানুষজনকে হঠাতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হল। বাজার-দোকানের বাড়তি ভিড়ও সরিয়ে দেওয়া হয় অনেক জায়গায়।

পুলিশ জানায়, সকালে বিভিন্ন জায়গায় মিষ্টি এবং চায়ের দোকানে আড্ডা জমছিল। উত্তরপাড়ার কাঁঠালবাগানে একটি চায়ের দোকান থেকে পুলিশ দু’জনকে থানায় ‌নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কমিশনারেটের সাতটি থানা এলাকা থেকে প্রায় দেড়শো জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁরা থানা থেকে জামিন পান। পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘ধৃতদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হচ্ছে। পরে তাঁদের আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।’’

পান্ডুয়ায় কয়েকটি অটো-টোটো বেরিয়েছিল। পুলিশ সেগুলি বন্ধ করে দেয়। কালনা মোড়ে লাঠি উঁচিয়ে জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে কয়েক জন চাল ব্যবসায়ীকে বাড়তি দাম না-নেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়। সকালে পোলবায় বস্তা তৈরির একটি কারখানায় উৎপাদ‌ন চালুর খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে দেয়। প্ল্যাটফর্মের আড্ডা বন্ধে বিভিন্ন স্টেশনে মাইকে ঘোষণা হয়। চণ্ডীতলা, সিঙ্গুর, হরিপালে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয় জমায়েত ভাঙতে।

মাইকে প্রচার, পুলিশের রুট মার্চ সত্ত্বেও আরামবাগ মহকুমার কিছু জায়গায় হাট-বাজারে, পাড়ার মোড়ে ভিড় জমে। পুলিশ অবশ্য অনেক জায়গাতেই লাঠি উঁচিয়ে ভিড় খেদিয়ে দেয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাঁরা সাইকেল, মোটরবাইক বা গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়। এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস জানান, ৬৫ জনকে আটক করা হয়। হাট-বাজারে পুলিশ-পিকেট বসানো হয়েছে। বাইরের গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরের জেলা থেকে আরামবাগে কাজ করতে আসা ৬০ জন শ্রমিককে বাড়িতে ফেরার জন্য এ দিন বাসের বন্দোবস্ত করে দেয় পুলিশ। তার আগে হাসপাতালে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়।

এ দিনও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের ‘নাকা চেকিং’ চলে। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, মানুষ ঘরে না ঢুকলে জোর খাটানো ছাড়া রাস্তা নেই।’’

তারকেশ্বরের রামনগরে এ দিন একটি বিয়েবাড়িতে এবং এই ব্লকেরই বালিগোড়ি-১ পঞ্চায়েতের জয়নগরে একটি শ্রাদ্ধবাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। খবর পেয়ে দু’টি অনুষ্ঠানই বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

পুলিশকে ভিড় হটাতে দেখা গিয়েছে হাওড়াতেও। উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা, ডোমজুড় প্রভৃতি এলাকায় রাস্তা থেকে ভিড় হঠিয়ে দেয় পুলিশ। কোথাও লাঠি উঁচিয়ে, কোথাও আবার বুঝিয়ে-সুঝিয়ে। বাগনানে পুলিশ চায়ের দোকান পর্যন্ত খুলতে দেয়নি। আমতায় কলাতলা মোড় এবং নতুন রাস্তার মোড়ে অভিযান চালিয়ে যে দু’একটি দোকান খোলা ছিল তা-ও বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বিকেল যত গড়াতে থাকে রাস্তাঘাট আরও নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy