Advertisement
E-Paper

মুগ ডাল ১৩০ টাকা, হামলে পড়ল জনতা

মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন,  গোটা দেশ তিন সপ্তাহ লকডাউন থাকবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৫:৪১
লকডাউনে বুধবার ডানকুনি বাজারের ছবিটা এমনই। ছবি: দীপঙ্কর দে

লকডাউনে বুধবার ডানকুনি বাজারের ছবিটা এমনই। ছবি: দীপঙ্কর দে

দিন কয়েক আগে মুসুর ডাল ছিল ৮০ টাকা কেজি। রবিবার তা হয়েছিল ৯০ টাকা। বুধবার সটান পৌঁছে গেল ১১০ টাকায়!

মুগ ডাল এক দিনের মধ্যে ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা কেজি।

পোলট্রির ডিম ৫ টাকা থেকে লাফিয়ে ৬ টাকা।

লকডাউনের আগে যে চালের কেজি ছিল ৪০ টাকা, বুধবার তা কিনতে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। মুরগির মাংসের দামও বেড়েছে অনেকটাই।

এই চিত্র হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ার একটি বাজারের। জেলার আর পাঁচটা বাজারের ছবিটাও কার্যত একই। করোনা-জুজুতে সন্ত্রস্ত মানুষজন চাইছেন, যত বেশি সম্ভব খাদ্যসামগ্রী বাড়িতে মজুত করে রাখতে। আর সেই সুযোগেই কালোবাজারি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।

মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, গোটা দেশ তিন সপ্তাহ লকডাউন থাকবে। তাঁর ভাষণ শেষ হতে না-হতেই হুগলির বিভিন্ন প্রান্তের বাজারে, মুদি দোকানে ভিড় আছড়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বহু দোকানে মজুত পোলট্রির ডিম, মুড়ি, আটা-সহ বিভিন্ন সামগ্রী শেষ হয়ে যায়। বুধবার সকাল থেকেও একাধিক থলে হাতে বাজারে বেড়িয়ে পড়েন গৃহস্থেরা। গেরস্থ। প্রায় সব জিনিসের দামে তাঁদের হাতে ছেঁকা লেগেছে। তাতেও যতটা সম্ভব কেনাকাটা করে রেখেছেন তাঁরা। একই কথা প্রযোজ্য মাছের ক্ষেত্রেও।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কোনও সঙ্কট হবে না। বাজার-দোকান খোলা থাকবে। ব্যবসায়ী সংগঠনও একই আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু অনেকেই তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। আর তারই সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির বিক্রেতা। ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, বহু মানুষ অতিরিক্ত জিনিস কিনছেন। তাতেই কৃত্রিম অভাব তৈরি হচ্ছে বাজারে। দাম বেড়ে যাওয়ার এটা অন্যতম কারণ। একই কারণে দোকানের সামনে লম্বা লাইন পড়ছে।

চুঁচুড়ার আখনবাজারের বাসিন্দা অঞ্জলি বিশ্বাস স্থানীয় খড়ুয়াবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন এ দিন। তাঁর কথায়, ‘‘বেশ কয়েক দিন লকআউট চলবে। পাছে খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে যায়, তাই এসেছি। কিন্তু সব কিছুর দামই অত্যধিক। তাও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তবে পাওয়া যাচ্ছে।’’ রবীন্দ্রনগর বাজারের মুদি দোকানি গৌর কুণ্ডু বলেন, ‘‘অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বেশি পরিমাণে জিনিস কিনছেন। দোকানের সামনে জমায়েতও বেশি হচ্ছে।’’

শেওড়াফুলি হাটে পাইকারি বাজারে অবশ্য আনাজের দাম গত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। ‘কাঁচা আনাজ ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক সুকল্যাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাঁচা আনাজ মজুত করা যায় না। দাম বেশি রাখা বা জমিয়ে রাখার প্রশ্নও নেই।’’ শেওড়াফুলিতে মাছ-মাংস-ডিমের খুচরো দাম অবশ্য এ দিন অনেকটাই বেশি ছিল। কালোবাজারি রুখতে এ দিন অভিযানে নামে তারকেশ্বর পুরসভা। উপ-পুরপ্রধান-সহ কাউন্সিলররা বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখেন। তারকেশ্বরের উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডু বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মূল্যে জিনিস বিক্রি করতে বলা হয়েছে। কোনও ব্যবসায়ীকে কালোবাজারি করতে দেখলেই তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে এ সব সহ্য করা হবে না।’’

বিভিন্ন জায়গায় সকালের দিকে দোকান-বাজার সেরে ফেলার জন্য পুলিশ নজরদারিতে কিছুটা শিথিলতা দেখায়। কিন্তু বেলা গড়াতে এ দিনও পুলিশ রাস্তায় নেমে জমায়েত হঠিয়েছে। কোথাও কোথাও লাঠিও চালাতে হয়। অভিযোগ, গোঘাট থেকে উত্তরপাড়া— সর্বত্রই এক শ্রেণির মানুষের রাস্তায় বেরনোর প্রবণতা থেকে গিয়েছে। বন্ধ হয়নি ঊর্ধ্বশ্বাসে মোটরবাইক ছোটানোও। কেউ যাতে অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে না বের হন, সে জন্য এ দিনও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার চলে।

এ দিন কিছু জায়গায়, বিশেষত কমিশনারেট এলাকায় পুলিশ আনাজ বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দাগিয়ে দিতে শুরু করে। যেখানে রাস্তার উপরে আনাজ বিক্রেতারা ভিড় করে বসেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও বিকল্প জায়গা খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘পুলিশের নিষেধ অগ্রাহ্য করে বাইরে বের হওয়ার জন্য ধড়পাকড় অব্যাহত আছে। কমিশনারেটের সাতটি থানা এলাকায় দেড়শোরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের তরফে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া দেওয়া হচ্ছে রাস্তামুখী মানুষকে। প্রয়োজনে লাঠিচার্জও করা হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ক্লাবে দরজা বন্ধ করে ‘আসর’ বসানো হচ্ছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ অভিযোগ সত্যি। পুলিশ নজর রাখছে ক্লাবগুলির উপর। তেমন দেখলে ক্লাবে তালা মেরে দেওয়া হবে।’’

এ দিন আরামবাগ মহকুমায় অবাঞ্ছিত ভিড় হটাতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ে। বড় হাট-বাজারে আনাজ, মাছ ইত্যাদির ব্যবসায়ীদের ১০ ফুট তফাতে বসানোর ব্যবস্থা হয়। কালোবাজারি হচ্ছে কিনা যাচাই করতে পুলিশ এবং পুর-আধিকারিকরা যত্রতত্র হানা দেন। পান্ডুয়ায় পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা বৈঁচীতে চালের আড়ত এবং চালকলে হানা দেন। ক্রেতাদের থেকে অতিরিক্ত দাম নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়।

Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy