Advertisement
E-Paper

অসহায়দের পাশে চুঁচুড়ার ‘কাশ্মীরি দাদা’

ময়নাডাঙায় যে মুদি দোকান থেকে তাঁরা কেনাকাটা করেন, সেখানে থেকেই ওই অসহায় মানুষদের খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন আরশাদরা।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০১:২৯
স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে আরশাদ (বাঁ িদক)। সাহায্যের চিরকুট (ডান দিক)। ছবি: তাপস ঘোষ

স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে আরশাদ (বাঁ িদক)। সাহায্যের চিরকুট (ডান দিক)। ছবি: তাপস ঘোষ

‘কাশ্মীরি দাদা’র চিরকুট মুদির দোকানে দেখালেই বিনা পয়সায় মিলছে চাল-ডাল!

আরশাদ হোসেন আদতে কাশ্মীরের বাসিন্দা। গত বারো বছর ধরে অবশ্য তাঁর স্থায়ী ঠিকানা চুঁচুড়ার ময়নাডাঙা। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘কাশ্মীরি দাদা’। আশৈশব ভূস্বর্গে বেড়ে ওঠার জন্য ‘কার্ফু’ শব্দটার সঙ্গে তাঁর পরিচিতি কম নয়। গৃহবন্দি হয়ে থাকার যন্ত্রণাও অজানা নয়। করোনাভাইরাস আটকাতে লকডাউনের জেরে বঙ্গের বহু মানুষ কতটা সঙ্কটে পড়েছেন, আরশাদ বিলক্ষণ জানেন। তাই এলাকার অসহায় বেশ কিছু মানুষের পাশে দাঁড়াতে তাঁদের খাদ্যসামগ্রী জোগানের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পাশে পেয়েছেন স্ত্রী বিপাশা ঘোষকে।

ময়নাডাঙায় যে মুদি দোকান থেকে তাঁরা কেনাকাটা করেন, সেখানে থেকেই ওই অসহায় মানুষদের খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন আরশাদরা। তাঁর লেখা চিরকুট দেখিয়ে অসহায় মানুষেরা চা‌ল-ডাল নিয়ে যাচ্ছেন ওই দোকান থেকে। আরশাদ জানান, লকডাউনের জেরে অসহায় মানুষের কথা ভেবে স্ত্রী-র সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। দু’জনে মিলে ঠিক করেন, জনাপঞ্চাশ মানুষের চাল-ডালের ব্যবস্থা করবে‌ন। সেই কথা ছড়িয়ে পড়তে অনেকেই তাঁদের থেকে সাহায্য চান। গত তিন দিন ধরে ওই দোকান মারফত তাঁদের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন দম্পতি।

এক সময় কাশ্মীর থেকে আরশাদ চুঁচুড়ায় আসতেন বাড়ি বাড়ি শাল-সোয়েটার বিক্রি করতে। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে তালডাঙার বাসিন্দা বিপাশার আলাপ হয়। তা থেকে ঘনিষ্ঠতা। ২০০৭ সালে বিয়ে। তখন থেকেই সংসার করতে পাকাপাকি ভাবে এখানে থেকে যান আরশাদ। ময়নাডাঙায় ঘর ভাড়া নেন। আরশাদ তাঁর পুরনো পেশাতেই রয়ে গিয়েছেন। বিপাশা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। ছেলে আয়ান আব্বাস চুঁচুড়ার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।

আরশাদ বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় বেরনো উচিত নয়। তাই দোকান থেকে অসহায়দের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। অনেক মানুষের রোজগার বন্ধ। কার্ফুর সময় কাশ্মীরে সাধারণ মা‌নুষের যা অবস্থা দেখেছি, সেই স্মৃতি ফিরে আসছে। কিছু মানুষের পাশে যে দাঁড়াতে পারছি, তাতে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’’ বিপাশার কথায়, ‘‘আমাদের সন্তান আছে। আমরা চাই সব বাবা-মা যেন সন্তানের মুখে ডাল-ভাতটুকু তুলে দিতে পারেন। তাই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ওঁদের পাশে থাকছি।’’

দম্পতির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। জয়ন্তী সাহা নামে এক মহিলা আরশাদের চিরকুট নিয়েই চাল-ডাল পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কাশ্মীরি-দাদা আমাদের জন্য অনেকটাই করছেন। ওঁর জন্য দু’টো ফুটিয়ে খেতে পারছি।’’

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Chinsurah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy