Advertisement
E-Paper

মোটরবাইকে চড়ে দুষ্কর্ম, অভিযুক্তের বাড়িতে হামলা

কখনও পথচারীর পিঠে এসে পড়ছিল লাঠির বাড়ি। কখনও টেনে দেওয়া হচ্ছিল চুল। কখনও মহিলাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা হচ্ছিল, কখনও বা হেনস্থা।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৩
ভাঙচুরের পরে। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙচুরের পরে। নিজস্ব চিত্র।

কখনও পথচারীর পিঠে এসে পড়ছিল লাঠির বাড়ি। কখনও টেনে দেওয়া হচ্ছিল চুল। কখনও মহিলাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা হচ্ছিল, কখনও বা হেনস্থা।

প্রায় এক মাস ধরে সন্ধ্যার পর থেকে কয়েক ঘণ্টা চুঁচুড়ার ধরমপুর, ষষ্ঠীতলা, নোনাপুকুর, ফুলপুকুর, তোলাফটক-সহ কয়েকটি এলাকায় এমনই নানা দুষ্কর্মে রাস্তায় বেরনো মানুষদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল হেলমেট পরা দুই মোটরবাইক আরোহী। চেষ্টা করেও তাদের নাগাল পাচ্ছিলেন না ওই সব এলাকার মানুষ। দুষ্কৃর্মের পরে দ্রুত গতিতে মোটরবাইক ছুটিয়ে তারা চম্পট দিচ্ছিল। কিন্তু বুধবার রাতে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। চুল টানায় নোনাপুকুরের এক তরুণী চিৎকার করে ওঠেন। রাস্তার লোকজন সজাগ হয়ে যান। এক জনের ছোড়া বাঁশের আঘাতে মোটরবাইক-চালকের হেলমেট খুলে রাস্তায় পড়ে যায়। তবে, বাইক-আরোহীদের জনতা ধরতে পারেনি। তারা বাইক নিয়ে চম্পট দেয়। এর পরেই ধরমপুরের সমন্বয় পল্লির এক কলেজ ছাত্রই এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, এই অভিযোগ তুলে স্থানীয় লোকজন ওই রাতে তার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। যদিও অভিযুক্তের নাগাল পায়নি তারা। হেলমেট খুলে যাওয়াতেই ওই ছাত্রকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে হামলাকারীদের দাবি।

রাত ১২টা নাগাদ সমন্বয় পল্লিতে গোলমাল থামাতে পুলিশ যায়। পরে পুলিশের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে পথচারীদের মারধর এবং রাস্তায় তরুণীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হেলমেটটি উদ্ধার করা হয়েছে।

অভিযুক্তের বাবার কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। কয়েক মাস আগে তাঁর কিনে দেওয়া মোটরবাইক নিয়েই যে ছেলে সঙ্গী জুটিয়ে রাস্তায় দুষ্কর্ম করে বেড়াচ্ছিল, এ কথা মানতে পারছিলেন না অভিযুক্তের বাবা। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের আব্দারে মোটরবাইকটা কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু ও যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে, জানা ছিল না। রাতে হঠাৎই লোকজন আমাদের বাড়ি ঘিরে ভাঙচুর চালাল। ছেলে রাতে বাড়ি ফেরেনি। ওর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছি না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোটরবাইকে বেশির ভাগ সময় দু’জন থাকত। কখনও-সখনও তিন জন। এক মাস ধরে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চুঁচুড়ার বিভিন্ন এলাকায় তারা দুষ্কর্ম চালাচ্ছিল। শিশু থেকে মহিলা বা বৃদ্ধ— কেউই ছাড় পেতেন না তাদের হাত থেকে। কয়েকদিন আগে ধরমপুরের ৭০ বছরের বৃদ্ধ সুকুমার মাল সন্ধ্যায় কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ধরমপুর মাঠের কাছে বাইক-আরোহীদের লাঠির ঘা খান তিনি। তার পরে এক কলেজ ছাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় বাইক আরোহীরা। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে।

ওই বাইক-আরোহীদের নাগাল পেতে কম চেষ্টা করেননি ধরমপুর ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। কোনও অচেনা বাইক আরোহীকে এলাকায় দেখলে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করেছিলেন। কিন্তু সমস্যা মিটছিল না। নির্দিষ্ট বাইকটির নম্বর এতই ছোট করে লেখা, যে তা ঠাহর করার আগেই আরোহীরা চম্পট দিচ্ছিল বলে অনেকেই দাবি করেছেন। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ধরমপুরের এক স্কুলছাত্র ওষুধ কিনে ফিরছিল। ষষ্ঠীতলার কাছে হেলমেট পরা দুই মোটরবাইক আরোহী তাকে লাঠির বাড়ি মারে। ছাত্রের চিৎকারে লোকজন ছুটে আসেন। কিন্তু বাইক-আরোহীদের ধরতে পারেননি। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা সতর্ক হয়ে টহল শুরু করে দেন। এর পরে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ নোনাপুকুরে ওই ঘটনা। বাঁশের আঘাতে বাইকের হেডলাইটও ভেঙে যায়। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ধরমপুরের অন্তত ৮০ জন মানুষ অভিযুক্তের বাড়িতে হামলা চালায়।

ধরমপুরের কয়েক জন জানান, ওরা মাঝেমধ্যে বোতল থেকে জলও ছুড়ে দিত। গায়ে লাগলে জ্বালা করত। সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘হাতেনাতে ধরতে না পারলেও এ বার অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। ওর সঙ্গীও মনে হয় এলাকারই ছেলে।’’

vandalism crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy