Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে দম্পতির গুলিবিদ্ধ দেহ

নিজেদের ঘর থেকেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল এক দম্পতিকে। পুলিশের অনুমান, দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে গুলিবিদ্ধ হয়ে। পিঠে গুলির ক্ষত নিয়ে স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে ছিল বিছানার উপরে। আর মাথার ডান দিকে আড়াই ইঞ্চি গভীর ক্ষত নিয়ে স্বামীর দেহটি পাওয়া যায় মেঝেতে। ওই ঘরেই মিলেছে একটি ওয়ান শটার পিস্তল।

রাজেশকুমার সিংহ এবং সবিতা সিংহ। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

রাজেশকুমার সিংহ এবং সবিতা সিংহ। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৭
Share: Save:

নিজেদের ঘর থেকেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল এক দম্পতিকে। পুলিশের অনুমান, দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে গুলিবিদ্ধ হয়ে। পিঠে গুলির ক্ষত নিয়ে স্ত্রীর মৃতদেহ পড়ে ছিল বিছানার উপরে। আর মাথার ডান দিকে আড়াই ইঞ্চি গভীর ক্ষত নিয়ে স্বামীর দেহটি পাওয়া যায় মেঝেতে। ওই ঘরেই মিলেছে একটি ওয়ান শটার পিস্তল।

শনিবার সাতসকালে লিলুয়ার কাজিপাড়া ওয়াই রোডের একটি বাড়ি থেকে এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছে রাজেশকুমার সিংহ (৩৭) ও তাঁর স্ত্রী সবিতা সিংহের (৩৫) দেহ। রাজেশবাবু কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। সবিতাদেবী ছিলেন গৃহবধূ। পুলিশ জানিয়েছে, ন’বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁরা ছিলেন নিঃসন্তান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই দোতলা বাড়িতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গেই থাকতেন সস্ত্রীক রাজেশ। তিনি বাড়ির ছোট ছেলে। ওই বাড়িতে তাঁর আরও পাঁচ দাদা থাকেন। পুলিশকে বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, প্রতি দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে পড়তেন রাজেশ ও সবিতা। এ দিন সাতটার পরেও তাঁরা উঠছেন না দেখে তাঁরা রাজেশ ও সবিতাকে ডাকতে যান। সাড়া না মেলায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ওই দৃশ্য দেখা যায়।

খবর পেয়েই পুলিশের পদস্থ কর্তারা ছুটে আসেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, মহিলার গলায় আঙুলের দাগ মিলেছে। সম্ভবত তাঁকে শ্বাসরোধ করারও চেষ্টা হয়েছিল। তবে ঠিক কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, ময়না-তদন্তের পরেই তা স্পষ্ট হবে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই দোতলা বাড়ির সামনে গোটা পাড়াই প্রায় ভেঙে পড়েছে। খবর পেয়ে কাশীপুরের বাড়ি থেকে চলে এসেছেন সবিতার বাবা-মা। রাজেশবাবুর শ্বশুর সুনীল সিংহ জানান, তাঁর মেয়ে ও জামাইয়ের মধ্যে খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল। কোনও সমস্যার কথা তাঁরা শোনেননি। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘রাজেশ খুব ভাল ছেলে। ও সবিতাকে খুন করবে কেন? আর আত্মহত্যাই বা করতে যাবে কেন?’’

পুলিশ জানায়, রাজেশবাবুর এক ভাই রাকেশ সিংহও কাশীপুর গান অ্যান্ড শেলে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রী ববিতা সিংহ পুলিশকে জানিয়েছেন, রাজেশবাবু লক্ষ লক্ষ টাকা ক্রেডিট কার্ডে ঋণ করেছিলেন। গত কালই দিল্লির একটি ব্যাঙ্ক ফোন করে নাকি হুমকিও দিয়েছিল তাঁকে। সেই কারণে রাজেশবাবুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কোনও গোলমাল হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

রাজেশবাবুর ঘর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর দেহে রয়েছে গুলির স্পষ্ট ক্ষত। কিন্তু সিংহ বাড়ির সকলেরই দাবি, তাঁরা কোনও গুলির শব্দ শোনেননি। তা হলে রাজেশের মৃত্যু কী ভাবে হল? আর ওই ওয়ান শটারই বা কার?

তদন্তকারীদের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে ঘটনাটি স্ত্রীকে খুন করে স্বামীর আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনায় এমন কিছু ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে, যেগুলির উত্তর না পেলে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। যেমন, বাড়ির লোকজন বলেছেন, সকালে ঘরের দরজা ভেঙে তাঁরা মৃতদেহ দেখতে পান। কিন্তু দরজা ভাঙা হলে আশপাশের বাড়ির লোকজন টের পেলেন না কেন? বাড়ির লোকেরা যে সত্যি বলছেন, তারই বা প্রমাণ কী? গুলি চলে থাকলে কেউ আওয়াজ পেলেন না কেন? রাজেশবাবু ক্রেডিট কার্ডে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণই বা নিয়েছিলেন কেন? সেই টাকা খরচ করলেন কী ভাবে?

হাওড়ার ডিসি (উত্তর) জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, ‘‘এই ঘটনা থেকে এমন কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে, যার উত্তর না পেলে খুনের কারণ স্পষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয়। সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Shot Couple Liluah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE