Advertisement
E-Paper

চুঁচুড়ার টোটো-চালকের দেহ মিলল সমুদ্রগড়ে

চুঁচুড়া-ব্যান্ডেল রুটে টোটো চালাতেন শেখ সৈয়দ। বুধবার রাতে তিনি না-ফেরায় বাড়ির লোকজন চিন্তায় পড়েন। মোবাইলে ফোন করলে তা বেজে যায়। খোঁজখবর চলতে থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:০৫
শেখ সৈয়দ আলি।

শেখ সৈয়দ আলি।

মাস চারেক আগে নলি কেটে খুন করে ব্যান্ডেলের এক টোটো-চালকের দেহ তাঁর বাড়ির কাছেই কলাগাছ চাপা দিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনার এখনও কিনারা হয়নি। এ বার চুঁচুড়ার এক প্রৌঢ় টোটো-চালক খুন হয়ে গেলেন।

বুধবার সন্ধ্যায় টোটো নিয়ে বেরিয়েছিলেন চুঁচুড়ার পাঙ্খাটুলি এলাকার বিবির বাগানের মিত্র গলির বাসিন্দা শেখ সৈয়দ আলি (৫৩) নামে ওই চালক। আর ফেরেননি। বৃহস্পতিবার রাতে বধর্মানের সমুদ্রগড়ের একটি বাঁশবাগান থেকে মিলল তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ। কিছুটা দূর থেকে মিলেছে টোটোটিও।

একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে বধর্মানের নাদনঘাট থানার পুলিশ। শুক্রবার রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা অধরা। খুনের কারণ নিয়ে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট অন্ধকারে। নিহতের পরিবার দু’রকম সন্দেহ করছে। এলাকার এক যুবকের থেকে পাওনা টোটো-ভাড়া নিয়ে বিবাদ বেধেছিল শেখ সৈয়দের। সে কারণে খুন বলে সন্দেহ। শুক্রবার সকালেই ওই যুবকের বাড়িতে হামলা চালান এলাকার কয়েকজন। পুলিশ ওই যুবককে আটক করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্য কোনও এফআইআর হয়নি। আবার মাস পাঁচেক আগে গণপিটুনিতে এলাকার এক দুষ্কৃতীর মৃত্যুর বদলার জেরেও শেখ সৈয়দ খুন হতে পারেন, এমনটাও মনে করছে পরিবার।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘খুনের ঘটনাটি অন্য জেলায় ঘটেছে। তদন্ত ওখানেই হবে। ঘটনায় কারা জড়িত, খতিয়ে দেখা হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

আর্তি: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের পরিজনরা। ছবি: তাপস ঘোষ।

চুঁচুড়া-ব্যান্ডেল রুটে টোটো চালাতেন শেখ সৈয়দ। বুধবার রাতে তিনি না-ফেরায় বাড়ির লোকজন চিন্তায় পড়েন। মোবাইলে ফোন করলে তা বেজে যায়। খোঁজখবর চলতে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতের দিকে প্রৌঢ়ের স্ত্রী আলো বিবি স্বামীর মোবাইলে ফের ফোন করেন। এ বার ফোন ধরেন নাদনঘাট থানার এক পুলিশকর্মী। তিনিই আলো বিবিকে ঘটনার কথা জানান। রাতেই নাদনঘাটে গিয়ে মৃতদেহ এবং টোটো শনাক্ত করেন শেখ সৈয়দের পরিবারের লোকেরা। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পাঙ্খাটুলির কাবেরীপাড়ার এক যুবক তাঁর চিমনি সরবরাহের কাজের জন্য মাঝেমধ্যেই শেখ সৈয়দের টোটো ভাড়া করতেন। তাঁর বেশ কিছু ভাড়া বাকি পড়েছিল। সৈয়দ চাইলে হুমকি শুনতে হতো। ওই যুবকের শ্বশুরবাড়ি সমুদ্রগড়ে। তাই সেখানে নিয়ে গিয়ে তিনি সৈয়দকে খুন করতে পারেন বলে মনে করছেন নিহতের পরিবারের লোকেরা। ওই যুবকের ঠাকুমা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আমি এ সব কিছুই জানি না। নাতি বৃহস্পতিবার আরামবাগে কাজে গিয়েছিল। শুক্রবার সকালে পুলিশ থানায় ডাকল। কেন বলতে পারব না।’’

গত বছরের ২০ অক্টোবর সৈয়দের প্রতিবন্ধী ভাগ্নে শেখ সমীর খুন হন। এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে তাঁর দেহ মিলেছিল। এক দুষ্কৃতীর দাবিমতো মাদক এনে না-দেওয়ায় তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার জেরে পরের দিনই গণধোলাইয়ে মৃত্যু হয় ওই দুষ্কৃতীর। মাদক কারবারে যুক্ত কয়েক জনের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। তার পরেও এলাকায় মাদক ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার বদলা হিসেবেও সৈয়দ খুন হতে পারেন বলে মনে করছেন নিহতের স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘একই এলাকায় পরপর একই ঘটনা! কিছুই বুঝতে পারছি না। কাবেরীপাড়ার ওই যুবকও অসামাজিক কাজ করত। সঠিক তদন্ত করে পুলিশ যেন দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে।’’

ওই এলাকার এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘এখানে মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কাজ— কিছুই বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিবাদ করলে দুষ্কৃতীরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। প্রশাসনের উচিত কড়া হাতে এ সব মোকাবিলা করার।’’ পরপর দু’টি ঘটনার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে চুঁচুড়া থানা এলাকার টোটো-চালকদের মধ্যে।

Sheikh Syed Ali murder TOTO Driver Chinsurah Samudrgarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy