Advertisement
০৬ মে ২০২৪

জ্বরে কাঁপছে পুলিশও

এলাকায় পুলিশ এসেছে! শুনলেই ভয়ে কাঁপতে থাকেন অনেকে। কিন্তু শ্রীরামপুর শহরে এখন ভয়ে কাঁপছে পুলিশই। সৌজন্যে ‘এডিস ইজিপ্টাই’ নামক ছোট পতঙ্গ।এই ছোট্ট পতঙ্গের দাপটে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ঘুম উড়ে গিয়েছে পুলিশেরও।

মশার লার্ভা নষ্ট করতে থানার পুকুরে ছাড়া হচ্ছে মাছ।শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মশার লার্ভা নষ্ট করতে থানার পুকুরে ছাড়া হচ্ছে মাছ।শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দীপঙ্কর দে
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

এলাকায় পুলিশ এসেছে! শুনলেই ভয়ে কাঁপতে থাকেন অনেকে। কিন্তু শ্রীরামপুর শহরে এখন ভয়ে কাঁপছে পুলিশই। সৌজন্যে ‘এডিস ইজিপ্টাই’ নামক ছোট পতঙ্গ।

এই ছোট্ট পতঙ্গের দাপটে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ঘুম উড়ে গিয়েছে পুলিশেরও।

চিত্রটা ঠিক কেমন?

শনিবার দুপুর দেড়টা। মাথায় ছাতা। সুঠাম চেহারার ইন্দ্রজিৎ মিস্ত্রি শুকনো মুখে হেঁটে ফিরছিলেন। শ্রীরামপুরের এসডিপিও-র এই ছায়াসঙ্গী পুলিশকর্মীর মুখের চেহারা এমন কেন? উত্তর এল, ‘‘শুক্রবার সকাল থেকে জ্বর। হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এলাম। সকালে একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত দিয়ে এলাম। এখন ফের হাসপাতালে দিতে হল।’’ শুধু ইন্দ্রজিৎবাবু নন। শ্রীরামপুর পুলিশ লাইনই কাঁপছে মশার ভয়ে। পুলিশকর্মীদের এই অবস্থায় মহার্ঘ্য ছুটি মিললেও শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না। তাই ব্যারাক ছেড়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না অনেকে। ইতিমধ্যেই মহকুমা পুলিশ লাইনের অন্তত ১১ জন কর্মী জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। অনেকে আবার ম্যাজম্যাজে শরীর নিয়েও ‘ডিউটি’ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘দুপুরে ভাত খেতে ইচ্ছে করল না। জ্বর এল বলে!’’

শুধু পুলিশ লাইন নয়। পুলিশ লাইন ছাড়িয়ে জ্বর ঘাঁটি গেড়েছে থানার আইসি-র টেবিলের আশপাশেও। মশা দমনে কিছু দিন আগেই থানার ভিতরে ওষুধ ছড়ানো হয়েছে। পুকুরে মাছ ছাড়া হয়েছে পুরসভার তরফে। কিন্তু তাতেইবা রেহাই মিলল কই! ইতিমধ্যেই সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশকর্মী মিলিয়ে জনা পনেরোর নাম উঠে গিয়েছে জ্বরে আক্রান্তের তালিকায়। তাঁদের মধ্যে চার-পাঁচ জনের এমন পরিস্থিতি যে, নার্সিংহোমে ভর্তি হতে হয়েছে ডেঙ্গি হওয়ায়। ভর্তির তালিকায় রয়েছেন এসআই রাজকিরণ মুখোপাধ্যায় ও কনস্টেবল পীযূষ বিশ্বাসও। থানারই এক অফিসার বলছিলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে থানার স্বাভাবিক কাজকর্ম চা‌লানো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একেই কম লোকে কাজ করতে হয়। তার উপরে জ্বরের হানা!’’

এই ‘কম্পনের’ আর এক ছবি পাওয়া গেল শ্রীরামপুর থানায়। এই দু’তিন দিন আগে একটি খুনের ঘটনায় তদন্তের কাজে শ্রীরামপুর থানায় এসেছিলেন পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী। সেই দুপুরে মশার আতঙ্কে পুলিশ সুপারের দেহরক্ষীরা থানার বাইরে থিতু হয়ে বসতে চাইছিলেন না। পাছে সুযোগ নেয় মশা। সুযোগ পেলেই ‘এক কামড়েই কাত’।

পুলিশকর্মীদের অনুযোগ, ‘‘মশা রুখতে কীটনাশক ছড়ানোর ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও থানা এবং পুলিশ লাইনকেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। না হলে তো প্রশাসনিক কাজকর্মই লাটে উঠবে। কিন্তু এই কথা শুনছে কে? যে পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের পুলিশ ব্যারাকে থাকতে হয়, কোনও সরকারি কর্মী এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কথা মেনে নিতেন না। কিন্তু আমাদের সে উপায় নেই। এখন যা অবস্থা চাকরি করতে এসে মশার কামড়ে প্রাণ যেতে বসেছে।’’ জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘চাকরির কিছু বাধ্যবাধকতা আমাদের সকলেরই রয়েছে, এটা বাস্তব। নিচুতলার যে সমস্ত পুলিশকর্মী আছেন, তাঁদের খুবই প্রতিকূলতার মধ্যে ব্যারাকে রাত কাটাতে হয়। কোথাও জল পড়ে, কোথাও মশা, কোথাও সাপ-ব্যাঙ। এখন বাড়তি উপদ্রব মশা।’’

মশার দাপটে কি আইনশৃঙ্খলা সামলাতে সমস্যা হচ্ছে? জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অন্য জায়গা থেকে পুলিশকর্মী এখনই আনতে হচ্ছে না। তবে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, সমস্যা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Blood test Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE