বৈদ্যবাটী বাদামতলা সর্বজনীন শারদোৎসব সমিতির স্থায়ী মন্দির চত্বরেও বাঁশের ব্যারিকেড বাঁধা হয়েছে। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
জিরাটেরই কালিয়াগড় পূর্বপাড়ায় সপরিবারে দুর্গা হাজির ‘করোনা যোদ্ধা’ হিসেবে। পুজো কমিটির সভাপতি তপন দাসের বক্তব্য, ‘‘রায়কে সম্মান জানাচ্ছি। তবে আরও আগে এই নির্দেশ এলে ভাল হত।’’ শ্রীরামপুরের আপনজন পুজো কমিটির সর্বেসর্বা উত্তম রায়ের দাবি, ভিড় আটকাতে তাঁরা পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তবে আদালতের রায়কে সম্মান জানাচ্ছেন। উত্তরপাড়ার মাখলা এলাকার এক বিদায়ী পুর-কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘মণ্ডপে না যাওয়া নিয়ে মানুষকে কী ভাবে বোঝাব, সেটাই চিন্তার। পুলিশ, লাঠি দিয়ে তো সবটা হয় না।’’ ভদ্রকালী বলাকার পুজো উদ্যোক্তা সৌমেন ঘোষের কথায়, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা নিশ্চয়ই মানব। কিন্তু পুজো মণ্ডপকে কী ভাবে গণ্ডিবদ্ধ এলাকা করা হবে, বুঝতে পারছি না।’’
আরামবাগে ২-এর পল্লি পুজো কমিটির সম্পাদক সুবীর দে জানান, হাইকোর্টের রায় নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন আরামবাগের ৩-এর পল্লির পুজোর। মণ্ডপটি চার দিকে ঘেরা। রায়ের পরে উদ্যোক্তারা মণ্ডপের তিন দিক খোলার কথা ভাবছেন।
দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্যমন্দিরের থিম— লক্ষ্মণরেখার মধ্যে সীতা মাস্ক পরে বসে। বাইরে করোনাভাইরাসরূপী রাবণ। কর্মকর্তা তথা মণ্ডপশিল্পী মানস গণ বলেন, ‘‘মণ্ডপে ঢোকা-বেরনোর পৃথক রাস্তা রয়েছে। এখন কতটা কড়াকড়ি হবে, জানি না। দেখা যাক।’’ শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটী সম্মিলিত দুর্গোৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানস নন্দীর বক্তব্য, ‘‘পুজো কমিটিগুলোকে একটু অসুবিধায় পড়তে হবে। তবে মানুষের জীবন আগে। উৎসব পরে।’’
পুজোয় ভিড় যাতে না হয়, সে জন্য লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে কোভিড-কেয়ার নেটওয়ার্কের হুগলি চ্যাপ্টার। সংগঠনের তরফে গৌতম সরকার বলেন, ‘‘এই ধরনের রায়ের সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করে পুলিশ-প্রশাসনের সদিচ্ছা এবং সাধারণ মানুষের মান্যতার উপরে। আশা করব, জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে, সামগ্রিক বিপদ এড়াতে সবাই রায় মেনে নেবেন। আনন্দ-উৎসব তো ভবিষ্যতের জন্য তোলা রইলই।’’
নাগরিক সংগঠন ‘অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরাম’-এর সভাপতি তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী শৈলেন পর্বতের কথায়, ‘‘হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ যথার্থ। আদালত সমাজের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করল।’’
এ দিন সন্ধ্যায় হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন থানার ওসি, আইসি-দের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। তবে, কোনও প্রশাসনিক নির্দেশিকা পাননি ক্লাবকর্তারা। তাঁরা অপেক্ষায় রয়েছেন। উলুবেড়িয়ার নোনায় প্রায় দেড় মাস ধরে বাঁশের কাজের মণ্ডপ বানিয়েছে একটি ক্লাব। রায়ের কথা জানতে পেরে ক্লাবের এক কর্মকর্তা জানান, সুরক্ষা-বিধি মানার ক্ষেত্রে তাঁরা আগেই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এ বার আদালত যা বলেছে তা মেনে চলবেন। তবে শিল্পীরা খেটেখুটে মণ্ডপ বানিয়েছেন। দর্শনার্থীদের তা ভার্চুয়াল’ ভাবে দেখানোর ব্যবস্থা করবেন।
নাগরিকদের একটা বড় অংশও রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। উলুবেড়িয়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক সুশান্ত মাইতি বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায় সময়পোযোগী। কিন্তু তা মানার ক্ষেত্রে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সব কিছুই কাগজে কলমে থেকে যাবে। হু হু করে বাড়বে করোনা।’’