Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে শহর, মিটছে না জলসঙ্কট

একটি আটচালার বাজারকে ঘিরে এ শহরের বেড়ে ওঠা। শতবর্ষ প্রাচীন ওই বাজার এখনও একই রকম জমজমাট। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তাকে ঘিরে বাড়়ছে জনবসতি। তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়ি। হচ্ছে দোতলা-তিনতলা বাজার চত্বর।

জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালান।

জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালান।

নুরুল আবসার
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

একটি আটচালার বাজারকে ঘিরে এ শহরের বেড়ে ওঠা।

শতবর্ষ প্রাচীন ওই বাজার এখনও একই রকম জমজমাট। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তাকে ঘিরে বাড়়ছে জনবসতি। তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়ি। হচ্ছে দোতলা-তিনতলা বাজার চত্বর। গড়ে উঠেছে কলেজ, বালিকা বিদ্যালয়, হাসপাতাল। বাড়ছে মানুষের ব্যস্ততা। কিন্তু নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এখনও সেই তিমিরে শহর উদয়নারায়ণপুরে।

রয়েছে পানীয় জল সরবরাহের সঙ্কট। বাসিন্দাদের ভরসা এখনও নলকূপ। বেহাল দশা রাস্তাঘাটের। পথের ধারে জঞ্জাল জমে থাকে দিনের পর দিন। তাই এ সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পঞ্চায়েতের মধ্যে আটকে না থেকে এ শহরকে পুরসভার মর্যাদা দেওয়ার দাবি তুলতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা।

দাবির কথা মেনেও নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘উদয়নারায়ণপুরকে পুরসভার মর্যাদা দেওয়ার জন্য আমরা উদ্যোগী হয়েছি। এ জন্য শহর সংলগ্ন ৯টি মৌজা আমরা প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করেছি। বিষয়টি নিয়ে নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, প্রায় একশো বছর আগে স্থানীয় স্থানীয় চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের হাত ধরে এই শহরের পত্তন হয় কানা দামোদর নদীর পশ্চিম পাড়ে। তাঁরা ছিলেন জমিদার। জমিদারি পেয়েছিলেন বর্ধমান রাজাদের কাছ থেকে। তাঁরা ছিলেন দানশীল ও শিক্ষানুরাগী। ওই পরিবারেরই ঈশানচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯১১ সালে পত্তন করেন একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ের (এখন যেখানে ব্লক অফিস)। একই সঙ্গে তিনি খোলেন চতুষ্পাঠী। বসানো হয় আটচালা। পরে সারদাচরণ ইন্সটিটিউট এবং বীরেশ্বর বালিকা বিদ্যালয় গড়ে ওঠে এই পরিবারের হাত ধরে। উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং মাধবীলতা মহাবিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করেছিল ওই পরিবার। তাঁদের দেওয়া জমিতে গড়ে ওঠে গ্রন্থাগার।

আটচালার বাজারে চলছে কেনাকাটা।

ধীরে ধীরে মজে গিয়েছে কানা দামোদর। দু’দিক জুড়ে বিস্তৃত হয়েছে উদয়নারায়ণপুর শহর। দাতব্য চিকিৎসালয় আর নেই। তৈরি হয়েছে উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। পাততাড়ি গুটিয়েছে চতুস্পাঠী। গড়ে উঠেছে সারদাচরণ ইন্সটিটিউট নামে হাইস্কুল, বীরেশ্বর বালিকা বিদ্যালয়। হয়েছে মাধবীলতা মহাবিদ্যালয় নামে কলেজ। শহর আর ছোট্ট পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিস্তার ঘটেছে জঙ্গলপুর, শিবপুর, কুর্চি, বিনোদবাটি প্রভৃতি গ্রামেও। এই সব এলাকার মানুষ নিজেদের উদয়নারায়ণপুর শহরের বাসিন্দা বলতেই ভালবাসেন। তবে, এখনও টিকে রয়েছে জমিদারবাড়িটি। সেখানে জমিদার পরিবারের কেউ থাকেন না। বদলে তাঁরা রামকৃষ্ণ-সারদা মাতৃসঙ্ঘকে এই বাড়ি ব্যবহার করে দিয়েছেন। এখান থেকে মাতৃসংঘ চট্টোপাধ্যায় পরিবারের ইচ্ছানুসারে নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজকর্ম চালান। দুর্গাপুজোও হয় এখানে।

উদয়নারায়ণপুরের পরিচিতি আলু ও সব্জি চাষ, তাঁত শিল্প এবং হরেক সমবায় সমিতির জন্য। কিন্তু এ সবের বাইরে শহর বাড়ছে তার নিজের নিয়মেই। আর এর সঙ্গেই মাথাচাড়া দিচ্ছে সমস্যা। শহরে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা এখনও গড়ে ওঠেনি। ফলে, তা পড়ছে স্কুল সংলগ্ন পুকুরে, রাস্তার ধারে। হাসপাতালের সামনেও দেখা যায় ডাঁই করে পড়ে রয়েছে জঞ্জাল। হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, বকপোতায় দামোদরের পাড়ে আলাদা জায়গা করা হয়েছে, সেখানেই বর্জ্য ফেলা হবে। শহরের জঞ্জাল ফেলার জন্যও পৃথক জায়গা করা হচ্ছে বলে উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির দাবি। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা কবে গড়ে উঠবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় লোকজন।

রামকৃষ্ণ-সারদা মাতৃসঙ্ঘের সম্পাদিকা সন্ধ্যা দে বলেন, ‘‘শহরের উন্নতি হচ্ছে খাপছাড়া ভাবে। সুসংহত উন্নয়নের জন্য একে পুরসভায় উন্নীত করা উচিত। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ করা হলে অনেক সুবিধা হবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তারকনাথ মেটেও বলেন, ‘‘শহর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে পঞ্চায়েতের পক্ষে রাস্তাঘাট সারানো, জঞ্জাল অপসারণ বা পানীয় জলের ব্যবস্থা করা পুরোপুরি সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে পুরসভা হলে সুবিধা হয়।’’

পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিধায়ক।

ছবি: সুব্রত জানা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Udaynarayanpur Drinking water Nurul Absar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE