জোর করে কোনও চাঁদা নয়। চাঁজার জুলুম হলে কড়া পুলিশি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার ফল মিলছে কই! কালীপুজো তো ছিলই। এ বার জগদ্ধাত্রী পুজোতেও একই অভিযোগ উঠল।
মঙ্গলবার দুপুরে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় দাবিমতো চাঁদা না পেয়ে এক ট্রাকচালককে মারধরের ঘটনা ঘটল। ভাঙচুর করা হল ট্রাক। সব অভিযোগই একটি পুজো কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় অসম লিঙ্ক রোডে। চাঁদার জুলুমের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করেন ট্রাক চালকেরা। চার জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রহৃত ট্রাকচালক। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা পলাতক।
জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে। তাদের সবাইকেই গ্রেফতার করা হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে গুপ্তিপাড়া ২ পঞ্চায়েতের ফতেপুরের ‘‘আমরা ক’জন’ জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির তরফে ওই রাজ্য সড়কে চাঁদা তোলা হচ্ছিল। গোলমাল শুরু হয় বেলা ১২টা নাগাদ। সেই সময় পাটবোঝাই করে কলকাতার দিকে যাচ্ছিল একটি ট্রাক। ফতেপুর মাঠপাড়ার কাছে চাঁদা আদায়কারীর দল ট্রাকটিকে হরাত দেখিয়ে দাঁড় করায়। অভিযোগ, চালকের কাছে ১০০ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা। কিন্তু চালক অত টাকা দিতে রাজি হননি। তিনি ১০ টাকা দেবেন বলে জানান। এতেই খেপে যায় চাঁদা আদায়কারীরা। বাঁশ দিয়ে তারা ট্রাকের সামনের কাচ ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। চালক ট্রাক থেকে নেমে ভাঙচুরের প্রতিবাদ করলে ফল হয় উল্টো। চালককে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে কিল, চড়, ঘুসি মারা হয় বলে অভিযোগ। চোখের সামনে ওই ঘটনা দেখে অন্য গাড়ির চালকেরা নেমে আসেন। বেগতিক বুঝে চাঁদা আদায়কারীরা পিঠটান দেয়। এর পরেই ট্রাক চালকেরা মিলে ওই রাস্তায় অবরোধ শুরু করেন। খবর পেয়ে বলাগড় থানার ওসি বরুণ মিত্র বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। গোলমালকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
সুদীপ বিশ্বাস, দেবাশিস দাস, মদন বিশ্বাস এবং সমীর বিশ্বাস নামে চার যুবকের বিরুদ্ধে বলাগড় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রহৃত ট্রাকচালক। পুলিশ জানিয়েছে, সমীর বিশ্বাস নামে কারও খোঁজ মেলেনি। তবে বাকি তিন জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। প্রহৃত চালক পুলিশকে বলেন, ‘‘ওদের ইচ্ছেমতো টাকা দেব না বলতেই ট্রাকের কাচ ভেঙে দিল। গায়েও হাত তোলে। অন্য চালকেরা প্রতিবাদ না করলে হয়তো আরও মারত।’’ পুলিশ চালকের মেডিক্যাল পরীক্ষা করায়।
অভিযুক্ত সুদীপের বাবা সমীরণ বিশ্বাস পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। তিনি গুপ্তিপাড়া কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্য এবং ফতেপুরে ওই পুজোর সঙ্গেও যুক্ত। ঘটনার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কিছু হয়তো হয়েছে। কিন্তু কাউকে মারধর করা হয়নি। ছেলেগুলোকে মিথ্যা ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ ট্রাক চালকের কথাই বিশ্বাস করল।’’ তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় চাঁদা তোলাটা হয়তো ঠিক নয়। কিন্তু তার জন্য এ ভাবে মামলা করারও বোধহয় দরকার ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy