মণ্ডপে স্মরণ অশোকবাবুকে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মণ্ডপের ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে গুটি কয়েক ফাঁকা চেয়ার। চার দিকের পরিবেশটা অদ্ভুত রকমের চুপচাপ। তার মধ্যেই নাটমন্দিরের সামনে একটি চেয়ারে তিনি একা বসে। সশরীরে নয়, ফুল-মালায় ঢাকা ছবিতে!
প্রথমার দুপুরের মাত্র মিনিট পাঁচেকের একটা ঘটনা বদলে দিয়েছে সব কিছু। তাই ষষ্ঠীর সকালেও আশ্চর্য রকম নিস্তব্ধ বালির রাসবাড়ি এলাকার ব্যারাকপুর সর্বজনীনের মণ্ডপ। প্রতি বছরের মতো গত বৃহস্পতিবারও সকালে কুমোরটুলি থেকে নৌকা করে প্রতিমা আনতে গিয়েছিলেন পুজোর সহ-সভাপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। ফেরার পথে বাড়ির সামনের ঘাটে প্রতিমা নামানোর সময়েই আচমকা নৌকা থেকে জলে পড়ে মৃত্যু হয় বছর পঁয়ষট্টির ওই ব্যক্তির।
কমিটির সহ-সভাপতি তথা পাড়ার প্রবীণ সদস্যের এমন হঠাৎ মৃত্যুতে কার্যত মুষড়ে পরেছে গোটা এলাকা। পুজোর সম্পাদক মানবেন্দ্র রায় বলছেন, ‘‘মণ্ডপে প্রতিমা আনা হয়ে গিয়েছে, তাই পুজো তো করতেই হবে। কিন্তু আর কিছু করতে মন চাইছে না। তাই সব বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ আর এক সদস্যের কথায়, ‘‘মণ্ডপে আর কি আসব! এখানে অশোকদার ছবি দেখতে হবে, ভাবতে পারছি না। তাই কেউ আসছি না।’’
রাস্তার উপরেই কমিটির নিজস্ব নাটমন্দির। সেখানেই রয়েছে প্রতিমা। সামনের ফাঁকা জায়গায় রঙিন কাপড়ে তৈরি অস্থায়ী মণ্ডপে প্রতি বছরই পঞ্চমী থেকে ভিড় জমান এলাকাবাসী। সে দিনই ঘটা করে হয় উদ্বোধন। এ বার তা হয়নি। প্রথমার দুপুরে আচমকা অশোকবাবুর মৃত্যুর পরে তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সদস্যেরা। লাগানো হয়নি আলোর কারুকাজের বোর্ডও। রাস্তায় আগে থেকে লাগানো এলইডি আলোর চেনেও কালো কাগজ মুড়ে দেওয়া হয়েছে। সদস্যেরা জানালেন, পঞ্চমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নবমীতে এলাকার দেড় হাজার বাসিন্দার পংক্তিভোজনও এ বার বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ বিজয়া সম্মিলনীও।
রাস্তার বাতিস্তম্ভে, গাছে বাঁধা রয়েছে চোঙা। কিন্তু তাতে বাজছে না কোনও গান। ঢাকি এলেও এ বার শুধু পুজোর সময়টুকু ছাড়া তা বাজবে না বলেই জানালেন মানবেন্দ্রবাবু। কথার মাঝেই এলেন আর এক সদস্য রঞ্জিত চক্রবর্তী। নাটমন্দিরের রেলিংয়ে ঠেসান দিয়ে রাখা অশোকবাবুর ছবির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘‘সে দিন নৌকা থেকে নামার জন্য আমাকে ব্যাগটা ধরতে দিল। আমি হাত ধরতে বললাম। কিন্তু হাতটা ধরার আগেই সব শেষ।’’
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল। গানে, আলোয় ভরে উঠল আশপাশের এলাকা। কিন্তু ষষ্ঠীর দিনেও বিজয়ার সুর রয়ে গেল রাসবাড়ির আকাশে-বাতাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy