Advertisement
E-Paper

বাজার ফাঁকা, জোড়া অভিঘাতে ইদের আনন্দ ফিকে

টানা ৫৩ দিন ঘরে ঠায় বসে আছেন। সুরমা-আতর কিছুই কিনতে পারেননি। হাতে কানাকড়ি নেই।

পীযূষ নন্দী ও সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৬:২৩
ইদের আগের দিন উলুবেড়িয়া বাজারের অবস্থা। —নিজস্ব িচত্র

ইদের আগের দিন উলুবেড়িয়া বাজারের অবস্থা। —নিজস্ব িচত্র

এ বারই প্রথম নতুন টুপি ছাড়া ইদের নমাজ পড়বেন খানাকুলের গোপালনগরের জাহির আব্বাস।

এ বারই প্রথম ইদে বিরিয়ানিও খাবেন না বলে ঠিক করেছেন ওই যুবক।

টানা ৫৩ দিন ঘরে ঠায় বসে আছেন। সুরমা-আতর কিছুই কিনতে পারেননি। হাতে কানাকড়ি নেই।

আজ, সোমবার খুশির ইদ। মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু দুই জেলার মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলিতে সেই আনন্দ কার্যত ফিকে হয়ে গিয়েছে লকডাউন এবং আমপানের জোড়া অভিঘাতে। জাহিরের মতো দশা বহু মানুষেরই। তাই রবিবার, রমজান মাসের শেষ দিনেও বাজারগুলি কার্যত খাঁ খাঁ করেছে। পসরা নিয়ে বসে ছিলেন বিক্রেতা। ক্রেতার দেখা প্রায় মেলেইনি।

‘‘খুশির ইদ থেকে এ বার খুশিটাই হারিয়ে গিয়েছে।’’— বলছেন গোপালনগরের মসজিদতলাপাড়ার বাসিন্দা জাহির। তিনি মুম্বইয়ে সোনার দোকানে কাজ করতেন। লকডাউনের গোড়ায় বাড়ি ফেরেন। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের জন্য টুপি, সুরমা, আতর এ সব দূরঅস্ত্। তিন ছেলেকে পোশাকও কিনে দিতে পারিনি। ইদের জন্য জমানো টাকায় আলু, তেল, ডাল কিনে পেট ভরছে। চালটা রেশনে পেয়ে যাচ্ছি। এ বার মাংস-বিরিয়ানিও খাব না। বদলে সেমুই এবং নারকেল কিনে রেখেছি।”

ওই এলাকায় প্রায় আড়াইশো মুসলিম পরিবারের বাস। অধিকাংশ পরিবারের সদস্যেরা ভিন্ রাজ্যে সোনা-রুপো বা জরির কাজ করেন। লকডাউনের মাঝে কেউ কেউ ফিরেছেন। অনেকে পারেননি। শেখ সওকত আলি নামে এক বৃদ্ধ বললেন, “ইদে এ রকম মনঃকষ্টে কখনও থাকতে হয়নি। লকডাউনের জেরে দু’মাস ধরে উপার্জন নেই। যেটুকু আনাজ-ধান ছিল, তা-ও আমপান শেষ করে দিল। এ বার তো মসজিদে একসঙ্গে নমাজও পড়া যাবে না।’’ তুলনামূলক ভাবে সচ্ছল মুসলিম পরিবারগুলিতেও এ বার জাঁক নেই। খানাকুলের কাঁটাপুকুর গ্রামের শিক্ষক মহম্মদ সালেহিন বলেন, “মানসিক ভাবে ভাল নেই। নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন কিছু কেনার মানসিকতাই ছিল না। কারও কোনও আবদারও নেই। ইদে বিশেষ কোনও খাবারের পদও থাকছে না। অন্যবার বেনারসি সেমুই (মিহি এবং দামি) কিনলেও এ বার মোটা সেমুইতে নিয়ম রক্ষা হবে।”

এই মন খারাপের ছাপই রবিবার দেখা গিয়েছে বিভিন্ন বাজারে। পান্ডুয়ার খন্যান, বৈঁচী, সিমলাগড়, হাটতলা, কালনা মোড়ের জামাকাপড়ের দোকানগুলিতে ক্রেতা কই? পান্ডুয়ার এক নামী বস্ত্র বিপণির ম্যানেজার সুজিত দাস বলেন, ‘‘সকাল ন'টা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকছে। তবু ক্রেতার দেখা নেই। দোকান খোলার খরচই উঠছে না।’’ হাটতলা এলাকার আর এক বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক সুজিত দেবনাথ বলেন, ‘‘যান চলাচল এখনও স্বাভাবিক হয়নি। গ্রামগঞ্জের মানুষরা ইদের বাজার করতে আসবেন কী করে? কেউ কেউ করোনা-আতঙ্কেও বের হচ্ছেন না।’’ পান্ডুয়া বোসপাড়ার বাসিন্দা শেখ সাবির আলি বলেন, ‘‘দীর্ঘ লকডাউনে আর্থিক সঙ্কটে রয়েছি। তাই এ বছর ইদের বাজার করা হয়নি।’’

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ছবিটাও একই রকম। ইদের কেনাকাটা জমেনি। কলেজ গেট এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল মোল্লা বলেন, ‘‘মানুষের রোজগার নেই। তার উপর করোনা-আতঙ্ক। গাড়ি চলছে না । দূর থেকে কোনও ক্রেতা আসতে পারছেন না।’’ উলুবেড়িয়া শহরের ওটি রোডের ধারে প্রতি বছর ইদের আগে কিছু অস্থায়ী দোকান বোসে । এই বছর সেই সংখ্যা অনেক কম। সেখানেও ক্রেতা নামমাত্র। অথচ, সরকারি নির্দেশ মেনে প্রায় সব ব্যবসায়ীই দোকানের সামনে স্যানিটাইজ়ার রেখেছিলেন। মাস্কের জোগানও ছিল। দূরত্ব-বিধি মেনে ক্রেতারা যাতে দোকানে ঢোকেন, সে ব্যবস্থারও খামতি ছিল না। কিন্তু কোথায় ক্রেতা!

কবে যে আবার সব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে কে জানে! এই হাহুতাশই শোনা গিয়েছে বাজারে বাজারে।

তথ্য সহায়তা: সুশান্ত সরকার

Eid Uluberia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy