Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধের মৃত্যুতে উত্তপ্ত পাড়া, অভিযুক্ত ক্লাব

মৃতের নাম তপন মণ্ডল (৬৫)। ওই ব্যক্তির পরিবার ও পড়শিদের অভিযোগ, পাড়ার ক্লাবের জুলুমবাজির জন্য তাঁর কারখানা তথা রুজি-রোজগার তিন মাস আগে বন্ধ হয়ে যায়। দাশনগর থানার পুলিশ তপনবাবুর অভিযোগ গ্রহণ না করে তাঁকে আদালতে যাওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০০:১৭
শোকার্ত: তপনবাবুর মেয়ে অন্তরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: তপনবাবুর মেয়ে অন্তরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন পনেরো দিন আগে। হাসপাতালে ভর্তি সেই প্রবীণ নাগরিক রবিবার দুপুরে মারা যাওয়ার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাওড়ার দাশনগর এলাকার কামারডাঙা।

মৃতের নাম তপন মণ্ডল (৬৫)। ওই ব্যক্তির পরিবার ও পড়শিদের অভিযোগ, পাড়ার ক্লাবের জুলুমবাজির জন্য তাঁর কারখানা তথা রুজি-রোজগার তিন মাস আগে বন্ধ হয়ে যায়। দাশনগর থানার পুলিশ তপনবাবুর অভিযোগ গ্রহণ না করে তাঁকে আদালতে যাওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়েছিল। কোথাও প্রতিকার না পেয়ে তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর গায়ে আগুন দেন।

এ দিন বিকেলে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে তপনবাবুর মৃতদেহ নিয়ে পথ অবরোধ হয়, সরাতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে, তাঁদের ধাক্কাও দেওয়া হয়। পুলিশও লাঠি চালায়। কারখানার এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কামারডাঙা রোডের পাশে বসতবাড়ি লাগোয়া হাইড্রলিক প্রেস ও করাতকল ছিল তপনবাবুর। ছোট কারখানাটিই ছিল মানসিক রোগাক্রান্ত ছেলের চিকিৎসা, সংসারের খরচ চালানোর একমাত্র অবলম্বন।

কিন্তু মাস তিনেক আগে কারখানার সামনে ফাঁকা জমিতে স্থানীয় ক্লাবের পক্ষ থেকে মাটি ফেলা শুরু হয়। এলাকার মানুষের একাংশ জানাচ্ছেন, হাওড়া ময়দানে মেট্রোর সুড়ঙ্গ হওয়ার ফলে ওঠা মাটিই ফেলা হচ্ছিল। জমিটি হাওড়া উন্নয়ন সংস্থার। তা দখল করতেই মাটি ফেলা হয়েছিল। মেট্রোর কাজের মাটি ক্লাবের হাতে এল কী ভাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ দিন তপনবাবুর মেয়ে অন্তরা মণ্ডল জানান, সামনে ১০ ফুট উচ্চতার বেশি মাটি ফেলার ফলে কারখানার দরজা বন্ধ হয়ে যায়, সেটা খোলাই যেত না। কারখানা চালাতে পারছিলেন না তাঁর বাবা। বছর আঠাশের তরুণী অন্তরার কথায়, ‘‘ক্লাবের সদস্যদের অনুরোধ করা হয়, কিছু মাটি সরিয়ে নিন। যাতে কারখানা চালু করা যায়। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেননি। পুলিশ ও কাউন্সিলরকে জানানো হলেও কাজ হয়নি। উল্টে দাশনগর থানা থেকে বাবাকে আদালতে যেতে বলা হয়।’’

অন্তরা বলেন, ‘‘স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের সঙ্গী মাটি ফেলার সঙ্গে যুক্ত। তাই কেউ সাহস করেনি।’’ সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে ক্রমশ ভেঙে পড়েন তপনবাবু এবং ২৩ সেপ্টেম্বর কারখানার সামনে মাটির ওই স্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে তিনি গায়ে আগুন দেন বলে অন্তরা জানাচ্ছেন। হাওড়া জেলা হাসপাতালে তপনবাবু ভর্তি ছিলেন।

৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুব্রত পোল্লে অবশ্য বলেন, ‘‘আমি ক্লাবে গিয়ে মাটি সরিয়ে ফেলতে বলেছিলাম। ওঁরা শোনেনি। আমি তো মস্তান নই যে গিয়ে মারপিট করব।’’ তবে মাটি ফেলার সঙ্গে তাঁর সঙ্গীর যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। ক্লাবের কোনও সদস্যকে এ দিন পাওয়া যায়নি, ক্লাব বন্ধ ছিল।

Death Suicide Tapan Mandal Dasnagar কামারডাঙা তপন মণ্ডল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy