পাড়ি: ত্রাণকেন্দ্রের পথে উদয়নারায়ণপুরে। নিজস্ব চিত্র
দামোদরের জলে ডুবল উদয়নারায়ণপুরের আরও ৫টি পঞ্চায়েত এলাকা। প্রবল জলের তোড়ে প্রাণ গেল এক প্রৌঢ়ের।
হাওড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বুধবার উদয়নারায়ণপুরের চারটি পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে ডুবে গেল আরও পাঁচটি পঞ্চায়েত। তার মধ্যে রয়েছে ভবানীপুর-বিধিচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতও। এই পঞ্চায়েতেরই কুলটিকরি গ্রামের ভ্যানচালক শ্যামল প্রামাণিক (৫৮) স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে কুলটিকরি গঙ্গাধর হাইস্কুলের ত্রাণ শিবিরে উঠেছিলেন। সেখান থেকে ভ্যান চালিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গ্রামেরই একটি দোকানে খাবার কিনতে যান। ফেরার সময়ে ঘোষপাড়ার খড়িবনের কাছে ডিহিভুরসুট-আমতা রাজ্য সড়ক ডুবে যায়। প্রবল স্রোতে ভ্যানটি উল্টে গেলে দম্পতি পড়ে যান। স্ত্রী কোনওমতে রক্ষা পেলেও শ্যামলবাবু ভেসে যান প্রায় ২০০ মিটার দূরে। স্থানীয় বাসিন্দারা যখন তাঁকে উদ্ধার করেন তখন তিনি মারা গিয়েছেন। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী এই ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘বন্যার ফলেই মৃত্যু হয়েছে শ্যামলবাবুর।’’
কাঁচাবাড়ির দেওয়াল ধসে এ দিন দুপুরেই গুরুতর আহত হয় পিয়া দে নামে বছর তেরোর এক বালিকা। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা তাকে উদ্ধার করে স্পিডবোটে নিয়ে যান উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই বালিকাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়ে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
সোমবার থেকে ডিভিসি জল ছাড়তে শুরু করে। সেই জলে উদয়নারায়ণপুরের ১১টির মধ্যে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই বন্যা পরিস্থিতি হল। প্লাবিত হয়েছে আমতা-২ ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান— এই দু’টি পঞ্চায়েতও। উদয়নারাণপুরকে ভাসিয়েছে দামোদর। আমতা-২ ব্লককে মুণ্ডেশ্বরী। দুই ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের সঙ্গে স্থলপথে জেলার বাকি অংশের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এ দিন রাত থেকে শুরু করে আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত জল বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ডিভিসি যে জল ছেড়েছে, তা শুক্রবার দুপুরে এসে পৌঁছবে। ফলে, মানুষকে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
উদয়নারায়ণপুরে ৪৯টি এবং আমতা-২ ব্লকে ১৪টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এবং পানীয় জল, শুকনো খাবার এবং শিশুখাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। যদিও তাঁরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে দুর্গত এলাকার মানুষদের অভিযোগ।
উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ত্রাণের লরি ঢুকতে পারছে না। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা রেশন ডিলারদের কাছে থেকে চাল নিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়াতে শুরু করব। স্কুল থেকে মিড-ডে মিলের চালও নেওয়া হবে। চাল স্কুলে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy