হাসপাতালে স্বরূপকুমার হাজরা। — তাপস ঘোষ
হুকিং-এর তদন্তে গিয়ে মারধর খেলেন এক বিদ্যুৎকর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে ব্যান্ডেলের দক্ষিণ নলডাঙায়। পুলিশ জানায়, আহত বিদ্যুৎকর্মী রামস্বরূপ হাজরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ নলডাঙার সৃজনপল্লির বাসিন্দা গণেশ শা-এর বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এলাকায় যান বিদ্যুৎ দফতরের ৫ জন কর্মী। নেতৃত্বে ছিলেন ব্যান্ডেলের কাজিডাঙার স্টেশন ম্যানেজার তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র বিশ্বজিৎ সিংহ। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং-এর যে তার গণেশবাবুর বাড়িতে গিয়েছে তার ছবি তুলছিলেন কর্মীরা। ওই সময় গণেশবাবু ও ছেলে আকাশ ব্যান্ডেল বাজারের কাছে তাঁদের ওষুধের দোকানে ছিলেন। ঘরে ছিলেন স্ত্রী এবং বৌমা। বিদ্যুৎ দফতরের লোকেরা এসেছে, ফোনে খবর পেয়ে বাবা-ছেলে বাড়ি চলে আসেন।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্র খবর, কর্মীরা অভিযোগের কথা জানালে বাবা-ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অভিযোগ, তখন বাবা-ছেলে আত্মীয়স্বজনকে ডেকে পাঠান। লোকবল পেয়ে তাঁরা বিদ্যুৎকর্মীদের বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারধর করেন। গুরুতর জখম হন সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রামস্বরূপ হাজরা। এই খবর পেয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কিছু তৃণমূল কর্মী ঘটনাস্থলে এসে বিদ্যুৎকর্মীদের উদ্ধার করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় আহত বিদ্যুৎকর্মীকে ব্যান্ডেল ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশও পৌঁছে যায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে অভিযুক্ত বাবা-ছেলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়ন। বিদ্যুৎ দফতরের তরফে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রহৃত বিদ্যুৎকর্মী রামস্বরূপ হাজরা বলেন, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযুক্তরা রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের কাছে সেই অভিযোগ করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই ওই দিন আমরা সরেজমিন তদন্তে যাই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বাড়ির গৃহকর্তার নেতৃত্বে পরিবারের অন্য সদস্যরা আমাদের উপরে হামলা চালান।’’ গণেশবাবুর স্ত্রী গীতশ্রীদেবী অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ওঁনারা যখন আমাদের বাড়িতে আসেন, তখন ঘরে পুরুষ কেউ ছিল না। দরজা খুলতেই তাঁরা কোনও পরিচয় না দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েন। এরপর ছেলে ও স্বামী বাড়িতে ফিরলে তাঁদের মধ্যে বচসা হয়। মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তার পরেই বাবা-ছেলে কোথায় চলে গিয়েছে জানি না।’’
বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার বিশ্বজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘দফতরে বেশ কিছুদিন ধরেই ওই পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ আসছিল। সে জন্য বৃহস্পতিবার রাতে আমরা অভিযান চালাই। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের হাতে মার খেয়ে এক সহকর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।’’
তবে প্রশ্ন উঠছে, সাধারণত এমন অভিযোগ থাকলে, অভিযান চালানোর সময় সংশ্লিষ্ট দফতর পুলিশকে জানিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ওই দিন শুধুমাত্র আমরা হুকিং-এর ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। তাই থানায় জানানো হয়নি। অভিযুক্তদের ঘরেও আমরা ঢুকিনি। মিথ্যা অভিযোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy