Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জিএসটি-র জেরে দুই জেলার দুই চিত্র

জরি শিল্পে ধাক্কা হাওড়ায়

কারিগর-ওস্তাগররা জানিয়েছেন, জিএসটি চালুর প্রতিবাদে গুজরাতের সুরাতে বস্ত্রশিল্পে ধর্মঘট চলছে। ফলে, তাঁরা কাপড়ের থান আনাতে পারছেন না। মিলছে না পুঁতি, সলমা, বুইলেনের মতো কাঁচামালও। থানের উপরেই জরির নকশা তোলা হয়। ওই সব কাঁচামালও আসে সুরাত থেকে। ধর্মঘট চলছে এই সব শিল্পেও।

গতিহারা: এই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে না হাওড়ায়। ফাইল চিত্র

গতিহারা: এই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে না হাওড়ায়। ফাইল চিত্র

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

অন্যান্য বার পুজোর আগে এই সময়ে ওঁদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকে না। এ বার হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন হাওড়ার জরি শিল্পের কারিগর-ওস্তাগররা! কারণ জিএসটি-র জোড়া ধাক্কা।

কেমন সেই ধাক্কা?

কারিগর-ওস্তাগররা জানিয়েছেন, জিএসটি চালুর প্রতিবাদে গুজরাতের সুরাতে বস্ত্রশিল্পে ধর্মঘট চলছে। ফলে, তাঁরা কাপড়ের থান আনাতে পারছেন না। মিলছে না পুঁতি, সলমা, বুইলেনের মতো কাঁচামালও। থানের উপরেই জরির নকশা তোলা হয়। ওই সব কাঁচামালও আসে সুরাত থেকে। ধর্মঘট চলছে এই সব শিল্পেও। তা ছাড়া, ব্যবসায়ীরা এখনও জিএসটি নম্বর পাননি। ফলে, পুরনো কাঁচামাল থেকে যে সব জরির কাজ করা হয়েছিল, তা-ও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে, বিক্রিবাটা পুরোপুরি বন্ধ। কাজ না-থাকায় অনেক কারিগর বসে গিয়েছেন।

গ্রামীণ হাওড়ার অর্থনীতির ভাল-মন্দ অনেকটাই নির্ভর করে জরিশিল্পের উপরে। সাঁকরাইল, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া, আমতা, বাগনান এবং উদয়নারায়ণপুরের ঘরে ঘরে জরির কাজ হয়। সব মিলিয়ে জেলার অন্তত পাঁচ লক্ষ মানুষ এই কাজের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু জিএসটি-র ধাক্কায় সকলেরই কপালে ভাঁজ পড়েছে। ‘অল ইন্ডিয়া জরি ইউনিয়ন’-এর সভাপতি কাজি নবাব হোসেন নবাব নিজে ওস্তাগর। অন্তত পাঁচশো কারিগর তাঁর কাছে কাজ করতেন। সবাইকে বসিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘অন্তত পুজোর মরসুমের কথা মনে রেখে সরকার জরি শিল্পে জিএসটি চালুর আগে কিছু অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা নিতে পারত। উৎসবের মরসুমে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হলেন। ব্যবসাতেও এর প্রভাব পড়বে।’’ প্রায় একই কথা বলেছেন ‘সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ’ সংগঠনের সভাপতি মুজিবর রহমান মল্লিকও।

হাওড়ার ওস্তাগররা মূলত মেটিয়াবুরুজের হাটে এবং কলকাতায় মহাজনদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন। কিন্তু জিএসটি চালু হওয়ার পরে দু’জায়গাতেই দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে ক্ষোভ ওস্তাগরদের। মেটিয়াবুরুজ হাটের ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘এখানে আমার মতো আড়াই হাজার ব্যবসায়ী আছেন। দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে শাড়ি, লেহঙ্গা ইত্যাদি কিনে নিয়ে যান। তাঁরা আমাদের কাছ থেকে জিএসটি নম্বর চাইছেন। এত তাড়াতাড়ি কী ভাবে নম্বর দেওয়া যাবে? ওস্তাগরদেরও জিএসটি দরকার। পরিস্থিতি খুব জটিল।’’ কলকাতার এক মহাজন জানান, তাঁর কাছে জরির পণ্য কেনেন বিদেশের ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা সাফ জানিয়েছেন, মহাজনদের জিএসটি নম্বর না থাকলে তাঁদের কাছ থেকে পণ্য কিনবেন না। ওই মহাজনের কথায়, ‘‘আমরা জিএসটি নম্বর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু তা পেতে সময় লাগবে। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।’’

মাথায় হাত সাধারণ কারিগরদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE