কবে যে গানটির ৫০ বছর পেরিয়ে গেল, টের পাননি শ্রাবন্তী মজুমদার! এখনও বিদেশে, নিজের দেশে তাঁর কাছে ‘আয় খুকু আয়’ গান গাওয়ার অনুরোধ আসে। স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে আনন্দবাজার ডট কম-কে গায়িকা বললেন, “গানমুক্তির দু’বছর পরেও শ্রোতারা এই গান শুনতে চাইতেন না! খুব ভয় পেয়েছিলাম।”
সাল ১৯৭৬। পুজোয় শ্রাবন্তীর গান বেরোল ‘আয় খুকু আয়’। একই গানে কণ্ঠ দিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও। গানে তিনি বাবা, শ্রাবন্তী মেয়ে। “হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আগে আমার বন্ধু জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাবা। সেই সুবাদে মুখোপাধ্যায় পরিবারে আমার আনাগোনা ছিলই। হেমন্তদাও আমার কাছে পিতৃপ্রতীম।” ‘গায়ক’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে গায়িকা চিনলেন এই গানের সুবাদে। এখানেও চমক। এই গান প্রথমে গাওয়ার কথা ছিল হেমন্ত-কন্যা রাণু মুখোপাধ্যায়ের! তিনি সরে যাওয়ায় সুরকার ভি. বালসারা শ্রাবন্তীকে গাওয়ার জন্যে বলেন।
সে প্রসঙ্গ উঠতেই শ্রাবন্তী বললেন, “বিশ্বাস করুন, কেউ ঘুণাক্ষরে সে কথা আমায় টের পেতে দেননি। এতে যদি আমার মনখারাপ হয়, তাই হয়তো। পরে শুনে মনে হয়েছিল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার দ্বৈত গান এত জনপ্রিয়। রাণু গাইলে কী হত ভাবুন।” অথচ, গানমুক্তির পরে এই গান কেউ শুনতে চাইতেন না! কেন? প্রশ্ন করা হয় গায়িকাকে। শ্রাবন্তীর অনুমান, “সেই সময় গানের প্রচারের মাধ্যম বলতে একমাত্র আকাশবাণী। সেখানেও তুলনায় কম বাজানো হয়েছিল।”
শ্রোতাদের মধ্যে গান ছড়িয়ে দিতে শেষে অন্য পথ ধরেন শ্রাবন্তী। প্রত্যেক মঞ্চানুষ্ঠানে একাই গোটা গান গাইতে থাকেন। একটা সময়ের পরে দেখেন, অন্য কোনও গান নয়, ‘আয় খুকু আয়’-ই শুনতে চাইছেন সবাই! বাংলাদেশে এই গানের আধারে ছবি হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি গায়ক নতুন করে এই গান গেয়েছেন। “শুনতে শুনতে কেঁদে ফেলেছেন কত জন! আমি প্রথম প্রথম বুঝতে পারতাম না। অবাক হতাম এই ভেবে, বাবা-মেয়ের গল্প। দুঃখের তো কোনও জায়গা নেই! আমিও কাঁদি না। তা হলে?” একটা সময়ের পর শ্রাবন্তী তাঁর বাবাকে হারিয়েছেন। কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছেন বিদেশে। তখন ‘আয় খুকু আয়’ গাইতে বসে কান্নায় গলা বুজে এসেছে তাঁরও। “কত বার এমন হয়েছে, গাইতে গাইতে গান বন্ধ করে দিয়েছি। কান্নার দমক আটকাতে। সে দিন বুঝেছিলাম, কেন অনেক শ্রোতা এই গান শুনতে শুনতে কেঁদে ফেলতেন।”
শ্রাবন্তীর গর্ব, তিনিই প্রথম বাবা-মেয়েকে নিয়ে তৈরি একদম ভিন্নধারার গান গেয়েছেন। গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় কি সেই সময়ে ‘একা বাবা’কে নিয়ে গান বেঁধেছিলেন?
গায়িকার কথায়, “একেবারেই না। বাবাকে ছেড়ে একমাত্র মেয়ে বিদেশে পড়তে গিয়েছে। সেখানে কাজে-অকাজে, একাকিত্বে বারেবারে মনে পড়ছে বাবার কথা। বাবার সঙ্গে কাটানো একান্ত মুহূর্ত। সেটাই যেন সে গানের মধ্যে দিয়ে ফিরে দেখেছে।”