দূষণ-দৃশ্য: ভ্যাট উপচে রাস্তায় পড়ে রয়েছে আবর্জনা। বৃহস্পতিবার, হাওড়ার বৃন্দাবন মল্লিক লেনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও হাওড়ায় আবর্জনা তোলা নিয়ে সমস্যা মেটেনি। সকালের আবর্জনা তোলা হচ্ছে দুপুরে। সেই আবর্জনা তোলার পরে ফের সন্ধ্যার মধ্যেই রাস্তায় উপচে পড়ছে জঞ্জাল। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার না হওয়ার সমস্যা। বহু ওয়ার্ডেই নর্দমা ভরে গিয়েছে পাঁকে। যার জেরে দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে উঠেছে। আগের বোর্ডের কাউন্সিলরদের দাবি, সমস্যা হলে তাঁরা পুর প্রশাসককে জানাচ্ছেন। কারণ, তাঁদের হাতে বর্তমানে ক্ষমতা নেই। তাই পুর অফিসারদের তাঁরা কোনও নির্দেশ দিতে পারছেন না।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা পুর এলাকায় আগে ভ্যাট ছিল ৪১৩টি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কম্প্যাক্টর বসানোয় ১১৩টি ভ্যাট তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, বর্তমানে ভ্যাটের সংখ্যা ৩০০। ওই ৩০০টি ভ্যাটে আবর্জনা ফেলার জন্য রয়েছেন চার হাজার কর্মী। আর ভ্যাটগুলি থেকে আবর্জনা তুলে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ফেলার জন্য দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে সাতটি ঠিকাদার সংস্থাকে। ওই সংস্থাগুলি ৩০-৩৫টি ছোট গাড়ি এবং ১৯টি বড় ডাম্পার জাতীয় গাড়ি চালায়।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে বড় রাস্তার ভ্যাটগুলি থেকে সকাল ১০টার মধ্যে আবর্জনা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা দিনে ওই এক বারই।
দ্বিতীয় বার গাড়ি না আসায় বড় ভ্যাটগুলিতে বিকেলের মধ্যেই ফের ভরে যাচ্ছে আবর্জনায়। সব থেকে খারাপ অবস্থা হচ্ছে অলিগলির ভ্যাটগুলির। ওই সব ভ্যাট থেকে দিনে এক বার আবর্জনা তোলার কথা থাকলেও নিয়মিত তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে যে দিন গাড়ি এসে আবর্জনা তুলছে, সে দিনও সবটা পরিষ্কার হচ্ছে না।
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘যে সব ওয়ার্ডে গলির মধ্যে ঢুকে আবর্জনা তুলতে হয় (যেমন ২৫, ২৬, ৩২, ৩৩, ৪২, ৪৭ ও ৫০), সেখানে কাজ করতে করতে বেলা হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক ট্রিপের বেশি করা যায় না। ফলে জঞ্জাল জমেই থাকে।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই সমস্যা মেটাতে পূর্বতন কাউন্সিলরদের ভূমিকা কী?
জঞ্জাল সাফাই দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘এখন তো আমাদের হাতে সরাসরি দায়িত্ব নেই। তবু আমরা পাশে আছি। যা সমস্যা হয়, পুর প্রশাসককে আমরা জানাই।’’ এলাকার জঞ্জাল সাফাই বা নর্দমা পরিষ্কার নিয়ে আগের আর এক মেয়র পারিষদ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি এখনও দাঁড়িয়ে থেকে নর্দমা পরিষ্কার করাই। কিন্তু দিনে এক বার করে আবর্জনা পরিষ্কার হলে এর থেকে বেশি পরিষ্কার রাখা যাবে না। তা ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভ্যাটে আবর্জনা না ফেলে পাশের ওয়ার্ডের ভ্যাট কাছে থাকায় সেখানে ফেলা হচ্ছে। আমার ওয়ার্ডেও তা-ই হচ্ছে। আমি চিঠি দিয়ে পুর প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা কোনও পদক্ষেপ করেননি।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন কাউন্সিলর বলেন, ‘‘বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে যে সব ভ্যাট আছে, সেগুলি নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে না। নর্দমারও একই অবস্থা। মানুষ আমাদের ধরছে। আমাদের এ সব অভিযোগ পুর প্রশাসককে জানানো ছাড়া কিছু করার নেই।’’
জঞ্জালের সমস্যা নিয়ে হাওড়ার পুর প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘আমরা ভ্যাটের আবর্জনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তোলার চেষ্টা করছি। তবে সাফাইয়ের সময় নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কম্প্যাক্টর স্টেশন ও পোর্টেবল কম্প্যাক্টর বসানো হলে সমস্যা মিটে যাবে। তখন ভ্যাটের সংখ্যাও কমে যাবে। নিকাশির সমস্যা মেটাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy