Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Amta

জলসঙ্কট, বোরো চাষ নিয়ে উদ্বেগ

মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলেই এত বছর বোরো চাষে সেচের কাজ করে আসছিলেন হুগলির খানাকুলের দুই ব্লক এবং হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের চাষিরা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ-আমতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৫:০৩
Share: Save:

নদী থেকে মিলছে না পর্যাপ্ত জল। ফলে, দুই জেলার তিন ব্লকে এ বার বোরো ধানের ভবিষ্যৎ কী? করোনা-আতঙ্ককে ছাপিয়ে এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট চাষিদের মধ্যে।

মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলেই এত বছর বোরো চাষে সেচের কাজ করে আসছিলেন হুগলির খানাকুলের দুই ব্লক এবং হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের চাষিরা। কিন্তু এ বার বিশ্বব্যাঙ্কের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে মুণ্ডেশ্বরী নদীর সংস্কার কাজ চলছে। তাই সেচ-নির্ভর তিন ব্লকের কোথাও জল ধরে রাখতে ‘বোরো বাঁধ’ হয়নি। সেচ সমস্যা মেটাতে জেলা পরিষদ এবং কৃষি-সেচ দফতর থেকে যে সব বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল, হুগলিতে তারও সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ।

হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমান জানান, চাষিদের ফসল বাঁচাতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। পুরশুড়া ব্লক এলাকায় দামোদর নদের উপর শ্রীরামপুর স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ দিয়ে জল পাঠানো শুরু হয়েছে মুণ্ডেশ্বরীর বিভিন্ন খালে। সেই জল খানাকুলের দু’টি ব্লক এলাকার অনেকটা অংশের সেচের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘হুগলি জেলা পরিষদের সহায়তায় খানাকুলের তালবগিতে চারটি পাম্প বসিয়ে আমতার খালে জল ফেলা হচ্ছে। আশা করি, সেই জলে এখানকার তিনটি পঞ্চায়েতে বোরো চাষের সমস্যা মিটবে।’’

সমস্যা বেশি হুগলিতে। আরামবাগ মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খানাকুলের দু’টি ব্লকের বোরো ধান চাষের এলাকা মোট ১১ হাজার হেক্টর। এই জমির ৯০ শতাংশ অংশের বোরো চাষে ভরসা ‘বোরো বাঁধে’ জমা রাখা জল। মহকুমার অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই দুই ব্লক ভৌগোলিক ভাবে নিচুতে। গামলা বা কড়াইয়ের আকারে প্রায় ২৯৪ বর্গ কিলোমিটার এই এলাকায় রয়েছে ২৪টি পঞ্চায়েতের ১৪৭টি মৌজা। বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় আমন চাষ হয় না। আলু এবং বোরো চাষের জন্য মুণ্ডেশ্বরীর জলের উপরেই সকলে নির্ভরশীল। সেই জল ধরে রাখতে পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েত কিংবা জেলা পরিষদ থেকে নদীগর্ভে অস্থায়ী মাটির বাঁধ নির্মাণ করে ‘বোরো বাঁধ’ দেওয়া হয়। সেই বাঁধে আটকে থাকা জলই এই এলাকায় সেচের একমাত্র ভরসা। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাস নাগাদ বোরো ধান তোলা হয়। তার আগে ধান পুরুষ্ট করতে জল লাগে। এ বার সেটাই মিলছে না।

ফসল বাঁচাতে দিশেহারা চাষিরা গত ৩০ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গণস্বাক্ষর সংবলিত চিঠি পাঠান। চাষিদের দাবি, লকডাউন পরিস্থিতিতে যে হেতু মুণ্ডেশ্বরীর পলি তোলার কাজ বন্ধ রয়েছে, তাই ফের মুণ্ডেশ্বরী দিয়ে ডিভিসি-র ছাড়া জল পাঠানো হোক। না হলে পর্যাপ্ত পাম্পের ব্যবস্থা করে দামোদর এবং রূপনারায়ণ নদ জল তুলে স্থানীয় খালগুলিতে ফেলা হোক। ওই চিঠির প্রতিলিপি জেলা পরিষদেও পাঠানো হয়।

মুণ্ডেশ্বরীর সংস্কারের জন্য বোরো চাষে যে জল মিলবে না সে কথা এ বার আগেই জানানো হয়েছিল। সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে এ জন্য খানাকুলে ১৬টি পাম্প বসানোর আর্জি জানিয়েছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য নজিবুল করিম। সভাধিপতি জানিয়েছেন, জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে কৃষি-সেচ দফতরের যান্ত্রিক বিভাগ থেকে দিন চারেক আগে ১৬টি বড় পাম্প দেওয়া হয়েছে। যেগুলি ব্লক দু’টির দক্ষিণ প্রান্তে রূপনারায়ণ নদের জল তুলে বিভিন্ন খালের মাধ্যমে খানাকুল-২ ব্লকের নীচের দিকে থাকা মাড়োখানা, জগৎপুর এবং ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েত- সহ কয়েকটি এলাকায় সেচের জল সরবরাহ করতে পারবে।

যদিও এই ব্যবস্থায় বিশেষ কাজ হবে না বলে মনে করছেন চাষিরা। খানাকুল-২ ব্লকের নতিবপুরের চাষি বিমল মণ্ডলের খেদ, ‘‘দামোদর থেকে যে জল তুলে পাঠানো হচ্ছে, তা এতই কম যে স্থানীয় ১০-১২টি মৌজার জমিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।’’ বলপাই গ্রামের কাশীনাথ রায়ের প্রশ্ন, ‘‘মাত্র ১৬টি পাম্প বসিয়ে বড়জোর ২০টি মৌজার জমিতে সেচ সম্ভব। বাকি মৌজাগুলির কী হবে?’’

আমতা-২ ব্লকের জয়পুর, অমরাগড়ি এবং ঝিকিরা— এই তিন পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ হয়। এখানেও চাষিরা মুণ্ডেশ্বরীর জলের উপরেই নির্ভরশীল। খানাকুলের তালবগি থেকে একটি খালের মধ্যে দিয়ে এই তিন পঞ্চায়েত এলাকায় বোরো চাষের জল আসে। এ বার চাষিদের সমস্যা নিয়ে হাওড়া জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন আমতার বিধায়ক অসিত মিত্রও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amta Mundeswari River Medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE