Advertisement
E-Paper

এলাকায় গুলি, আতঙ্কিত চুঁচুড়া

শনিবার রাতে চুঁচুড়ার ওই ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে সুপারি ব্যবসার টাকা তুলে বাড়ি ফিরছিলেন চায়নাদেবী। বাড়ির একেবারে কাছে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুই দুষ্কৃতী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৮
রাজত্ব: ওপারের ওই মাঠেই বসে দুষ্কৃতীদের আড্ডা। সাঁকো পেরিয়ে তারা চলে আসে বসন্তবাগানে। সাঁকো তাই ভেঙে দিয়েছেন বাসিন্দারা। ছবি: তাপস ঘোষ

রাজত্ব: ওপারের ওই মাঠেই বসে দুষ্কৃতীদের আড্ডা। সাঁকো পেরিয়ে তারা চলে আসে বসন্তবাগানে। সাঁকো তাই ভেঙে দিয়েছেন বাসিন্দারা। ছবি: তাপস ঘোষ

সন্ধে থেকে ঝড়-বৃষ্টি। রাত বাড়তেই লোডশেডিং-এ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল পাড়া। তারই মধ্যে গুলির শব্দ শুনেছিলেন বসন্তবাগান এলাকার বাসিন্দা আন্না পাল, মায়া বিশ্বাসরা। তারপরেই এক মহিলার আর্তনাদ শুনে ঘরে থেকে বেরিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে বছর চল্লিশের চায়না সিকদার। আশঙ্কা জনক অবস্থা কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শনিবার রাতে চুঁচুড়ার ওই ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে সুপারি ব্যবসার টাকা তুলে বাড়ি ফিরছিলেন চায়নাদেবী। বাড়ির একেবারে কাছে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুই দুষ্কৃতী। তার আগে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাঁর টাকা নিয়ে বচসা বা ধস্তাধস্তি হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। তবে গুলি খেয়েও খানিকটা দৌ়ড়েছিলেন চায়নাদেবী। বুকের কাছে আগলে রেখেছিলেন টাকার ব্যাগ। ডান হাতের তলা দিয়ে গুলি গিয়ে বিঁধেছে পাঁজরে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে সেই গুলি বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বাড়ির একেবারে কাছে চলে আসায় চায়নাদেবী সাহস করে দৌড় দিয়েছিলেন। তাঁর চিৎকারে বেরিয়ে পড়েছিলেন প্রতিবেশীরাও। তাই বেগতিক দেখে টাকা ফেলেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা এলাকার সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দুষ্কৃতীদের চিহ্ণিত করার চেষ্টা করছি।’’

গত মাসেই হুগলির গুড়াপে এসে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে সতর্ক করে গিয়েছিলেন জেলায় বেড়ে চলা দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য নিয়ে। সে যাত্রায় পুলিশ কর্তারা ‘সব ঠিক আছে’ বলে সামাল দিলেও আদতে যে কিছুই ঠিক নেই তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। গত শুক্রবার দুপুরে চুঁচুড়ার সায়রা মোড়ের মোটরবাইক আরোহী দুই ছিনতাইকারী এক ব্যক্তির টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে চম্পট দেয়। ওই ব্যক্তি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফিরছিলেন। তার আগে খাদিনামোড়ের কাছে এক রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক থেকে পেনশনের টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে দিনের আলোয় এক বৃদ্ধার টাকা ছিনিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। সম্প্রতি চন্দননগরের জ্যোতির মোড়ের কাছে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ভদ্রশ্বরের মনসাতলার কাছে অস্ত্র দেখিয়ে এক বিমা কোম্পানির কর্মীর কাছে থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।

একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। চুঁচুড়া শহর জুড়ে মোটরবাইক আরোহী দুষ্কৃতীর দাপাদাপিতে আতঙ্কিত বাসিন্দারা। অভিযোগ এরা বেশিরভাগই কিশোর বা সদ্য যুবা। নির্জন রাস্তায় বা লোডশেডিং-এর অন্ধকারে নানা ধরনের অসামাজিক কাজ করে বেড়ায়। গত কয়েকদিন ধরে ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুঁচুড়া এবং ব্যান্ডেলের বেশ কয়েকটি জায়গায় গলার হার বা টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। নববর্ষের কেনাবেচা চলছে। তারই মধ্যে ওই দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যে আতঙ্কিত ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা সকলেই।

এ দিন সকালে বসন্তবাগানে চায়নীদেবীর বাড়িতে ভিড় করেন প্রতিবেশীরা। শত্রুতার জেরে এমন ঘটনা— মানতে নারাজ তাঁরা। কারণ সকলের সঙ্গেই সদ্ভাব রাখতেন চায়নাদেবী। নিতান্ত টাকা ছিনতাইয়ের জন্যই গুলি করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। এলাকার পাশে একটি পুকুর দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ও পারের ফাঁকা মাঠে নিয়মিত বসে মদ-গাঁজার আসর। পুকুরের উপর একটি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে তারা এ পারে এসে লুঠপাঠ চালায় অনেক সময়। এ দিন ওই বাঁশের সাঁকো ভেঙে দেন বাসিন্দারা। দাবি তোলেন অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।

Murder Chinsurah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy