Advertisement
E-Paper

কাঠগোলায় আগুন, আতঙ্ক

দমকল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ কাঠগোলার পিছন দিক থেকে আগুনের শিখা দেখতে পান মৃতদেহ সৎকারে আসা লোকজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৯
লেলিহান: তখনও জ্বলছে আগুন। নিজস্ব চিত্র

লেলিহান: তখনও জ্বলছে আগুন। নিজস্ব চিত্র

ফ্ল্যাটের বারান্দার দরজা খুলে শুয়েছিলেন প্রৌঢ় অজয়ভূষণ রায়। আচমকাই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চোখ মেলে দেখেন, বিছানার পাশে বন্ধ কাচের জানলার বাইরে আগুনের শিখা। বারান্দা থেকে গলগল করে কালো ধোঁয়া ঢুকছে ঘরে। ভয়ে চিৎকার করে ওঠেন হার্টের রোগী ওই প্রৌঢ়। অন্য ঘরে থাকা মেয়ে ও স্ত্রী এসে কোনও মতে পাঁচতলা থেকে তাঁকে নীচে জি টি রোডে নামিয়ে আনেন।

সোমবার রাতে বালির পাঠকঘাট শ্মশান সংলগ্ন একটি কাঠগোলায় আগুন লেগে যায়। মুহূর্তের মধ্যে সেই আগুন ভয়াল আকার ধারণ করে ওই কাঠগোলার পাশে থাকা পুরসভার অ্যানেক্স বিল্ডিং এবং একটি আবাসনের বাইরের দেওয়াল ছুঁয়ে ফেলে। যার জেরে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে। দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। কাঠগোলাটি ভস্মীভূত হওয়ার পাশাপাশি পুরসভার ওই অফিসে থাকা রাজ্য সরকারের যুব কল্যাণ দফতর, শ্রম দফতর এবং পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের সমস্ত নথি পুড়ে গিয়েছে। তবে হতাহতের খবর নেই।

দমকল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ কাঠগোলার পিছন দিক থেকে আগুনের শিখা দেখতে পান মৃতদেহ সৎকারে আসা লোকজন। তাঁদের চেঁচামেচিতে আশপাশের বাড়ি ও আবাসন থেকে বাসিন্দারা বেরিয়ে পড়েন। কিছু ক্ষণেই প্রায় পাঁচতলা বাড়ির উচ্চতায় পৌঁছে যায় আগুনের শিখা। গুদামের কাঠ ও লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি বারান্দা ভেঙে পড়তে থাকে। আগুন ধরে যায় পুরসভার অ্যানেক্স ভবনের দোতলায়। আগুনের তাপে আবাসনের কাচ ভেঙে পড়তে শুরু করে।

মৃতদেহ সৎকারে আসা তারাশঙ্কর মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি ছোটেন ২০০ মিটার দূরের বালি দমকল কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘‘শ্মশানের কর্মীরা পাম্প চালিয়ে জল দিলেও কিছু হচ্ছে না দেখে ছুটলাম দমকলে খবর দিতে।’’ ইতিমধ্যে বালি থানা থেকে পুলিশবাহিনী এসে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে আবাসন খালি করার কাজ শুরু করে। অভিযোগ, খবর পাওয়ারও প্রায় মিনিট কুড়ি পরে আসে দমকলের একটি ছোট ইঞ্জিন। পরে আসে বড় আর একটি ইঞ্জিন। সিইএসসি এসে পুর ভবন ও কাঠগোলার বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেয়।

ওই গুদামের লাগোয়া ঝুপড়িতে থাকেন শ্যাম পণ্ডিত। তিনি বলেন, ‘‘মৃতদেহ দাহ করতে আসা লোকজন যদি ঘুম থেকে ডেকে না তুলতেন, তা হলে হয়তো পুড়ে মরেই যেতাম।’’ আবাসনের আর এক বাসিন্দা অঞ্জনা দে বলেন, ‘‘আচমকা কাচ ভেঙে পড়ার শব্দে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি, জানলা দিয়ে আগুনের হল্কা ঢুকছে। বৃদ্ধ অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। শেষে পুলিশ এসে নীচে নামাল।’’

স্থানীয়েরা জানান, দমকলের দু’টি ইঞ্জিনের জল শেষ হয়ে গেলে আরও ইঞ্জিন আসে। আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান স্থানীয়েরাও। দমকলের হাওড়া কন্ট্রোলের স্টেশন অফিসার অঞ্জন পণ্ডিতের দাবি, ‘‘দমকল দেরিতে যায়নি। সময় মতো গিয়েই কাজ করেছে।’’ পুরসভার দফতরে আগুন ছড়িয়েছে খবর পেয়ে ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর রায়চৌধুরী-সহ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকেরা চলে আসেন।

রাত পৌনে দুটো নাগাদ নতুন করে আগুন ছড়ায় পুরসভার ওই ভবনে। প্রবল ধোঁয়ায় ভিতরে ঢুকতে না পেরে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা সব জানলার কাচ ভেঙে দেন। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণা, মেয়র পারিষদ (শ্মশান) শ্যামল মিত্র-সহ কর্তাব্যক্তিরা। মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভার পদস্থ কর্তারা পরিদর্শন করে দেখেছেন, অ্যাসেসমেন্ট (কর নির্ধারণ) বিভাগের বেশ কিছু নথি পুড়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যের শ্রম ও যুব কল্যাণ দফতরেরও কিছু ক্ষতি হয়েছে। পুরো বিষয়টিই তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা
নেওয়া হচ্ছে।’’

Fire Bali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy