Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জল নামেনি, বাজার যেতে ভরসা সাঁতার

রামপুর খালের জলে প্লাবিত ওই গ্রামটি এমনিতেই বন্যাপ্রবণ। বন্যা এড়াতে গ্রামের বিভিন্ন পাড়াগুলি উঁচু ঢিপির উপরে রয়েছে। কিন্তু এ বার ডিভিসি জল ছাড়ার পরে সেই ঢিপির উপরেও জল উঠে যায়

ত্রাণ: জয়পুরের মালিকপাড়া। ছবি: সুব্রত জানা।

ত্রাণ: জয়পুরের মালিকপাড়া। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৫
Share: Save:

বৃষ্টি ধরেছে। ডিভিসি জলও ছাড়েনি। কিন্তু তার পরেও দুর্ভোগ কমেনি হাওড়ার আমতা ২ নম্বর ব্লকের ঝামটিয়া পঞ্চায়েতের মধ্য জয়পুর গ্রামের মালিকপাড়ায়।

রামপুর খালের জলে প্লাবিত ওই গ্রামটি এমনিতেই বন্যাপ্রবণ। বন্যা এড়াতে গ্রামের বিভিন্ন পাড়াগুলি উঁচু ঢিপির উপরে রয়েছে। কিন্তু এ বার ডিভিসি জল ছাড়ার পরে সেই ঢিপির উপরেও জল উঠে যায়। এখন জল আস্তে আস্তে নামতে শুরু করার পরে ঢিপিগুলি বিছিন্ন দ্বীপের মতো জেগে উঠেছে। তবে মাঠেঘাটে এখনও প্রায় বুক সমান জল দাঁড়িয়ে।

মালিকপাড়ায় প্রায় ৫০টি পরিবারের বসতি রয়েছে। ওই পাড়ার তিন বছরের মেয়ে শর্মিষ্ঠা ভুক্ত কয়েক দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিল। শুক্রবার বুক সমান জল ভেঙে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যান বাবা সমর ভুক্ত। শর্মিষ্ঠার মা চন্দনাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ের চার দিন ধরে জ্বর। কিন্তু চার দিকে জল জমে থাকায় বাড়ি থেকে বেরোতেই পারিনি।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাড়ার প্রায় সবাই চাষের সঙ্গে যুক্ত। বৃষ্টি এবং ডিভিসির জলে পাড়া ডুবে যাওয়ায় এখন ভরসা নৌকা। কিন্তু নৌকার সংখ্যা কম। তাই বাজার করা কিংবা পানীয় জলের জন্য অনেকেই সাঁতরে অন্য পাড়ে উঠছেন। তিন দিন ধরে জ্বরে কাবু বছর পঁয়তাল্লিশের শ্যামল মারিক। তিনি বলেন, ‘‘আমার পক্ষে জ্বর গায়ে সাঁতার কেটে হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব নয়। নৌকাও পাইনি। তাই চিকিৎসক দেখানো হয়নি।’’

স্থানীয় বাসিন্দা জয়দেব ভুক্ত, শৈলেন মা‌রিকদের ক্ষোভ, সরকারি ত্রাণ পাওয়া যায়নি বললেই চলে। কয়েকজন ত্রিপল পেলেও তার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পূর্ণিমা মারিক নামে এক মহিলার ক্ষোভ, ‘‘গরুর দুধও অমিল। বাচ্চাদের কী খাওয়াবো বুঝতে পারছি না।’’

শুক্রবার ওই এলাকায় ত্রাণ দিতে এসেছিল দমদমের ‘শ্রীরামকৃষ্ণ প্রেমবিহার’ নামে একটি সংস্থা। তারা বন্যা দুর্গতদের মধ্যে চাল, আলু, শিশু খাদ্য, বিস্কুট ও লবণ বিলি করে। ত্রাণ নিয়ে আসা সংস্থাটির প্রধান স্বামী সতীদীপানন্দ বলেন, ‘‘এলাকার চাহিদার তুলনায় আমাদের প্রয়াস ক্ষুদ্র। চেষ্টা করেছি যাতে জলবন্দি মানুষের মুখে এক দিনের জন্যও হাসি ফোটে।’’

শুধু মালিকপাড়া নয়, আমতা ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা এখনও জলবন্দি। বৃহস্পতিবার জয়পুর থানা এলাকায় কয়েকটি জায়গায় ত্রাণ পৌঁছে দেন ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি বাবলু মণ্ডল। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪০০ ত্রিপল-সহ কেক, বিস্কুট, চাল-সহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী পাঠান।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, আমতা ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা অনেকটা ‘পেয়ালা’র মতো। তাই জল সরছে না। জল না সরায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতেও সমস্যা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood situation Amta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE