Advertisement
E-Paper

পুড়েছিল বই, হার মানেনি জেদি মেয়ে

কিরণ মাহাতো নামে ওই ছাত্রীর বাড়ি হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বেনারস রোডে। গত ১ সেপ্টেম্বর কিরণদের বাড়ির লাগোয়া রাসায়নিক কারখানায় আগুন লাগে। তাতে কিরণদের মতোই আরও সাতটি পরিবারের ঘর পুড়ে যায়।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০২:৫৪
কিরণ মাহাতো নামে ওই ছাত্রীর বাড়ি হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বেনারস রোডে। গত ১ সেপ্টেম্বর কিরণদের বাড়ির লাগোয়া রাসায়নিক কারখানায় আগুন লাগে। তাতে কিরণদের মতোই আরও সাতটি পরিবারের ঘর পুড়ে যায়।

কিরণ মাহাতো নামে ওই ছাত্রীর বাড়ি হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বেনারস রোডে। গত ১ সেপ্টেম্বর কিরণদের বাড়ির লাগোয়া রাসায়নিক কারখানায় আগুন লাগে। তাতে কিরণদের মতোই আরও সাতটি পরিবারের ঘর পুড়ে যায়।

দাউদাউ আগুনে চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার বইগুলি। বাড়ির পাঁচিলের পাশের রাসায়নিক কারখানার আগুন ভিটেছাড়া করেছিল পুরো পরিবারটিকেই। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা যখন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, ঠিক সেই সময়েই আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছিল শিক্ষকদের দেওয়া নোটস-সহ লেখাপড়ার বিভিন্ন সরঞ্জাম। তবে হার মানেনি ছাত্রীটি। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও লেখাপড়া করে মাধ্যমিকে ৬৮ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করল সেই ছাত্রী।

কিরণ মাহাতো নামে ওই ছাত্রীর বাড়ি হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বেনারস রোডে। গত ১ সেপ্টেম্বর কিরণদের বাড়ির লাগোয়া রাসায়নিক কারখানায় আগুন লাগে। তাতে কিরণদের মতোই আরও সাতটি পরিবারের ঘর পুড়ে যায়। ঘর থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে পালানোর পরে সবাই আশ্রয় নেন বেনারস রোডের পাশে পুরসভার দেওয়া ত্রিপলের নীচে। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতেও লেখাপড়া বন্ধ করেনি ছাত্রীটি। বরং‌ আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া কিরণের জেদ আরও বেড়ে যায়। ঘটনার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরে তাঁকে সাহায্য করতে অবশ্য শুভানুধ্যায়ীরাও এগিয়ে আসেন।

শুক্রবার সেই পোড়া কারখানার পাশে কিরণদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলা গেল ছাত্রীর সঙ্গে। ঘর বলতে বাড়ির একতলায় তাদের একটি ছোট কারখানা। সেখানেই সব মালপত্র সরিয়ে দিয়ে আপাতত বসবাস কিরণদের। প্রায় অন্ধকার ঘরে তক্তপোষের উপরে বসে কিরণ বলে, ‘‘সমস্ত বই খাতা পুড়ে গিয়েছিল। কী ভাবে লেখাপড়া করব তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। নোটস নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একটাও বই আস্ত নেই। সব মিলিয়ে একেবারে খারাপ অবস্থা।’’ তবে কিরণ ধন্যবাদ জানিয়েছে তার বন্ধুদের। যারা সেই বিপদের সময়ে নোটস দিয়ে তাকে সাহায্য করেছিল।

সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে কিরণকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন। কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রকে পরীক্ষার সব বই কিনে দেন। হাওড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর তৃণমূলের বিভাস হাজরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাওড়া পুরসভা গৃহহারা পরিবারগুলির জন্য ওই জায়গাতেই বাড়ি তৈরি করে দেয়।

এত ধরনের সমস্যার মধ্যেই এগিয়েছে ওই ছাত্রী। কিরণের কথায়, ‘‘সকলেই সাহায্য করেছেন। আমার লক্ষ্য ছিল ৭৫ শতাংশ নম্বর। সেটা হল না বলে খারাপ লাগছে।’’ ইতিমধ্যেই একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তিও হয়ে গিয়েছে কিরণ। লক্ষ্য ব্যাচেলর অফ টেকনোলজি পড়ে তার পরে আইআইটি-তে ভর্তি হওয়া।

কিরণের বাবা সঞ্জিতবাবু হাওড়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। তা সত্ত্বেও কিরণ ও তার বোনকে যথাসম্ভব ভাল ভাবে লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করছেন। সঞ্জিতবাবুর কথায়, ‘‘বই পুড়ে যাওয়ার পরে মেয়ে খুব কান্নাকাটি করেছিল। তবে ভেঙে পড়েনি। মনের জোর নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভালো করে পাশ করেছে।’’ এখনও বাড়ির দোতলা তৈরি হয়নি। কারখানার যে ঘরে বসবাস, সেখানে আলো-বাতাস প্রায় ঢোকেই না। পরিবারের রান্নাবান্নাও সেই ঘরে।

তেরো বাই দশ ফুটের ঘরেই এখন মাহাতোদের সংসার। সেখানেই জারি রয়েছে কিরণের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার লড়াই।

Madhyamik Examination 2019 Fire Girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy