Advertisement
E-Paper

অন্ধকারে ডুবে শ্রমিক মহল্লা

শুধু ডানলপ বা হিন্দমোটর নয়, মাস কয়েক আগেই গঙ্গা পাড়ের দু’টি চট কল বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাত দিনের ব্যবধানে। হুগলি শিল্পাঞ্চলে বেকার হয়েছেন ১০ হাজার শ্রমিক। পুজোর মুখে অসহায় কয়েক হাজার পরিবার।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪৭
বন্ধ: গোন্দলপাড়া জুটমিল। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ: গোন্দলপাড়া জুটমিল। নিজস্ব চিত্র

মহালয়ার ভোরে নিয়ম মাফিক রেডিও বেজেছে বীরেন ভদ্রের গলা। হিন্দমোটরের বন্ধ কারখানার গা ঘেঁষে, রেল লাইনের ধার বরাবর দু’এক গোছা কাশের দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুজোয় মন নেই ভুটান দাসের।

হিন্দমোটর স্টেশন রোডের বাসিন্দা ভুটানবাবু টোটো চালাচ্ছেন সম্প্রতি। আগে কাজ করতেন হিন্দমোটর কারখানায়। তিনি একা নন, তাঁর বাবাও। তবে তাঁর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, আগে গুজরাতের একটি সংস্থায় কাজ করতেন। পুজোর ঠিক আগে চাকরি গিয়েছে তাঁরও। ছেলে ফিরেছে বাড়ি— কিন্তু তাতে খুশি কই! দিন রাত এখন টোটো ভরসা দাস পরিবারের।

হিন্দমোটরের বডিশপের কর্মী ছিলেন ভুটান। বলেন, ‘‘ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। জিটি রোড দিয়ে কোতরঙের দিকে টোটো নিয়ে যখন যাই— কত চেনা মুখ। আগে দেখা হত কারখানায়। এখন কথা বলতে ইচ্ছে করে না।’’ ভুটানের স্মৃতিতে উঠে আসে সাদা অভিজাত সেই অ্যাম্বাস্যাডরের ছবি। ‘‘তখন আমাদের রমরমা অবস্থা। কারখানার টেস্টিং রোডে শ’য়ে শ’য়ে সাদা অ্যাম্বাস্যাডর। বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই দুর্গাপুজোর শুরু হত।’’ সে সব ম্লান হতে হতে হারিয়ে গিয়েছে আজ।

পুজোর এই আবহে পোড় খাওয়া সিটু নেতা প্রাক্তন সংসদ শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতে মামলা চলছে। ফের অ্যাম্বাস্যাডর তৈরি হবে। কিন্তু তা অন্য রাজ্য থেকে কেন? উত্তরপাড়া ইউনিট থেকেই নয় কেন? রাজ্য সরকার কিছু করুক। আমরা এই দাবিতে ফের পথে নামব।’’

একই অবস্থা ডানলপের কর্মীদের। বকেয়ার কানাকড়িও পাননি তাঁরা। ডানলপের কর্মীদের হয়ে আইনি লড়াই লড়ছেন বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন কারখানার মালিকানা কার? রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছে, আবার আদালতে কারখানা লিকুইডেশনে পাঠিয়ে অফিসার নিয়োগ করেছে। কিন্তু শ’য়ে শ’য়ে বৃদ্ধ অসহায়, অসুস্থ কর্মীরা যে নায্য বকেয়া পেলেন না তার কী হবে? রাজ্যের শ্রমদফতর তার দায়িত্ব পালন করেনি।’’

শুধু ডানলপ বা হিন্দমোটর নয়, মাস কয়েক আগেই গঙ্গা পাড়ের দু’টি চট কল বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাত দিনের ব্যবধানে। হুগলি শিল্পাঞ্চলে বেকার হয়েছেন ১০ হাজার শ্রমিক। পুজোর মুখে অসহায় কয়েক হাজার পরিবার।

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হুগলি শিল্পাঞ্চলের ক্ষয়িষ্ণু চেহারাটা ক্রমশ প্রকট হয়েছে। বন্ধ হয়েছে একের পর এক কারখানা। চন্দননগরের গোন্দলপাড়া এবং রিষড়ার হেস্টিংস জুটমিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কাঁচা পাটের অনিয়মিত জোগানের কারণেই মিল বন্ধ করতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। তা ছাড়া পাটের চাহিদাও তলানিতে বলে দাবি তাঁদের।

কিন্তু মিল বন্ধের কারণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে দুই শ্রমিক মহল্লাতেই। শ্রমিকদের পাল্টা বক্তব্য, জেলায় ১৪টি জুটমিলের মধ্যে ১২টি চালু রয়েছে। কেবল দু’টিতেই টানপড়ল জোগানে?

শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, ওই দু’টি কারখানাই কাজোরিয়া গোষ্ঠী পরিচালিত। সম্প্রতি রিষড়ার মিলটিতে সিবিআই হানা দেয়। অভ্যন্তরীণ সমস্যার জেরেই মিলগুলি বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকদের ফাঁকি দিতে অন্য গল্প ফাঁদছেন তাঁরা। শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত অবশ্য বলেন, ‘‘১০ হাজার শ্রমিক বেকার হলেন, এটা চিন্তার বিষয়। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। মিল চালানোর ক্ষেত্রে কী সমস্যা, তা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’

বন্ধ কারখানার তালিকা অবশ্য আরও দীর্ঘ। কোন্নগরে রিলাকশন, রিষড়ায় জেকে স্টিল, বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিল-সহ আরও চারটি কাপড়ের কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গঙ্গা অথবা রেললাইন ধরে যতই এগনো যাবে তালিকা দীর্ঘ হবে। নবতম সংযোজন ডানকুনির বিস্কুট কারখানা। শ’দেড়েক কর্মীর ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ আর্থিক মন্দার কথা জানিয়েছেন। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঝাঁপ।

Hindmotor Jute Mill Factory Closing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy