প্লাস্টিক ছাউনি দেওয়া ডানকুনি বাজার।
কয়েক মাস আগে কলকাতার বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ বিভিন্ন পুরসভার তরফে বাজারে বাজারে উপযুক্ত অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা কি হয়েছে? শনিবার রাতে গড়িয়াহাটের বহুতলে ফের আগুন লাগার পরে হুগলির বিভিন্ন বাজার ঘুরে সেই উত্তরই খুঁজল আনন্দবাজার।
উত্তরপাড়া বাজার
জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগারের উল্টোদিকেই জিটি রোডের ধারে একটি আবাসনের একতলায় এই বাজার। আনাজ ও মাছ বিক্রেতা মিলিয়ে দোকানির সংখ্যা শতাধিক। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির উপরে অপরিকল্পিত এই বাজারের পরিকাঠামোর সার্বিক চেহারা করুণ। প্লাস্টিক আর দাহ্য বস্তুতে ঠাসা বাজারে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। গ্যাস, কেরোসিন দিয়ে স্টোভে রান্না হয়। বিক্রেতাদের কথায়, ‘‘পুরসভা ভাল করে বাজারটাই পরিষ্কার করায় না। আগুন রুখতে ব্যবস্থা কে নেবে?’’ পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বাজারটি ব্যক্তিগত জমিতে হলেও বিষয়টি নিয়ে দমকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
ভদ্রকালী সখের বাজার
দোতলা এই পাকা বাজার তৈরি হয় বাম আমলে। মাছ, আনাজ, ফল এবং বিভিন্ন জিনিসের স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান মিলিয়ে অন্তত একশো মানুষের ব্যবসা রয়েছে বাজারে। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার প্রশ্নে এই বাজারের অবস্থাও তথৈবচ। প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়। স্টোভ জ্বলে। যত্রতত্র ঝুলছে বিদ্যুতের তার। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘দমকল ও বাজার কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি আনব।’’
লক্ষ্মীগঞ্জ বাজার
চন্দননগর শহরে এই বাজার তৈরি হয় ফরাসি উপনিবেশ-কালে। প্রাচীন এই বাজারের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা মান্ধাতা আমলের। বাজারে ঢোকার রাস্তা এতটাই ছোট যে, পাশাপাশি দু’জন চলা মুশকিল। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা হিসেবে জলাধার থাকলেও অপরিসর পথে দমকলের গাড়ি ঢোকার উপায় নেই। দমকল বিভাগ এবং পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাজার কর্তৃপক্ষের আলোচনা হলেও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
চন্দননগর বৌবাজার
রেললাইন-লাগোয়া এই বাজারে আনাজ, মাছ মিলিয়ে দোকানের সংখ্যা শতাধিক। বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে রয়েছে। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পুর-কর্তৃপক্ষকে বলেও পরিস্থিতি শোধরায়নি। আগুন লাগলে আফশোস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। বাজার কমিটির সম্পাদক বাদল দাস বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বাজারের অবস্থা বেহাল। বিদ্যুতের তার ঠিক ভাবে রাখা অত্যন্ত জরুরি।’’ পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখে ব্যবসায়ী এবং দমকল দফতরের সঙ্গে কথা বলে অগ্নি সুরক্ষা নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’
বিজয় মোদক মার্কেট
আরামবাগ শহরের ব্যস্ততম এলাকায় বাসস্ট্যান্ডের উপরে দু’টি তল নিয়ে তৈরি এই বাজার। শতাধিক দোকান, হোটেল, কিছু অফিস আছে। কিন্তু অগ্নি সুরক্ষার হাল খুবই খারাপ। বিপজ্জনক ভাবে জড়িয়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার। অস্থায়ী দোকানে স্টোভ জ্বালিয়ে চা-অমলেট তৈরি হয়। দোকানে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রের বালাই নেই। দমকল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ব্যবসায়ী এবং পুর-কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি।
শেওড়াফুলি হাট
রাজ্যের অন্যতম বড় এই হাট পাঁচ শতকের পুরনো। আনাজ, মাছ, মাংস, গোলদারি-সহ কয়েকশো দোকান রয়েছে। বহু বিক্রেতা ডালা নিয়েও বসেন। আগুন নেভানোর সুষ্ঠু পরিকাঠামো নেই। অনেক দোকানেই মাথার উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি। খুব কম দোকানেই অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে। অপরিসর হাটে সর্বত্র দমকলের গাড়ি ঢোকা মুশকিল। বড় আগুন লাগলে কী হবে, তা নিয়ে দমকলের আধিকারিকরাও চিন্তিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy