Advertisement
E-Paper

গাঁজা-বাঁকের গুঁতোয় আসর ভাঙে মদ্যপেরা

‘চলন্ত বার’ হিসেবে লোকাল ট্রেনকে ব্যবহার করে যারা, তারাও আসন ছাড়তে বা মজলিস গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয় বছরের তিন মাস। শ্রাবণ, ফাল্গুন এবং চৈত্র মাসে বহু প্রকৃত ধর্মপ্রাণ যেমন তারকেশ্বরের মন্দিরে পুজো দিতে যান, সেই সুযোগ নেয় এমন কিছু লোকও, যাদের নেশা-আসক্তি এবং তার উদ‌্‌যাপন প্রশ্নাতীত। তারা ট্রেনে উঠেই কামরাকে গাঁজার আসরে বদলে দেয়।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০১:৪৬
ট্রেনেই সুখটান। —নিজস্ব চিত্র।

ট্রেনেই সুখটান। —নিজস্ব চিত্র।

‘চলন্ত বার’ হিসেবে লোকাল ট্রেনকে ব্যবহার করে যারা, তারাও আসন ছাড়তে বা মজলিস গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয় বছরের তিন মাস। শ্রাবণ, ফাল্গুন এবং চৈত্র মাসে বহু প্রকৃত ধর্মপ্রাণ যেমন তারকেশ্বরের মন্দিরে পুজো দিতে যান, সেই সুযোগ নেয় এমন কিছু লোকও, যাদের নেশা-আসক্তি এবং তার উদ‌্‌যাপন প্রশ্নাতীত। তারা ট্রেনে উঠেই কামরাকে গাঁজার আসরে বদলে দেয়। সরকারি হিসেব বলছে, ওই তিন মাসে সপ্তাহের তিন দিন— শনি, রবি এবং সোমবার গড়ে দেড় থেকে তিন লক্ষ মানুষ তারকেশ্বরে যান। ভিড়ের কিছুটা সড়ক পথে যায়। কিন্তু বড় অংশ যায় ট্রেনে। বিশেষ করে হাওড়া স্টেশন থেকে যে কোনও ট্রেন ধরে শেওড়াফুলি স্টেশনে পৌঁছে স্থানীয় নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে গঙ্গার জল নিয়ে ফের ট্রেন ধরে বা সড়কপথে অনেকেই যায় তারকেশ্বরে। এবং এই ভক্তদের একাংশের ‘সৌজন্যে’ রাতের লোকাল ট্রেনের কামরা বদলে যায় গাঁজার ঠেকে।

নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা, শ্রাবণ, ফাল্গুন ও চৈত্রের রাতের ট্রেনে এই ‘তীর্থযাত্রী’দের দাপট সবচেয়ে বেশি। তাদের মধ্যে যারা সংখ্যাগুরু তারা কল্কেতে গাঁজা ভরে ছোট দলে ভাগ হয়ে কামরায় ছড়িয়ে পড়ে। ‘বোম ভোলে’, ‘জয় বাবা’র মতো নানা জিগির ছেড়ে হাতেহাতে ঘোরাতে থাকা গাঁজার কল্কে। সিগারেট বা বিড়ির থেকে মশলার আংশিক ফেলে দিয়ে তাতে গাঁজা ভরে সুখটান দেওয়া ‘তীর্থযাত্রী’রা সংখ্যায় কম। গাঁজার ধোঁয়া এবং কটূ গন্ধে প্রচণ্ড অস্বস্তি হলেও মুখ বুজে সহ্য করা উপায় থাকে না সাধারণ যাত্রীদের। আম দিনে যে সব লোকেরা রাতের ট্রেনে মদ্যপানের আসর বসায়, তারাও এই তীর্থযাত্রীদের ঘাঁটায় না। কারণ, তারাও জানে, ধর্ম-কর্মের নামে ওই দাপাদাপিতে রেল পুলিশও মাথা গলাতে উৎসাহী নয়। নিত্যযাত্রীদের একাংশের সঙ্গে এই তথাকথিত তীর্থযাত্রীদের মারপিটও হয়েছে চলন্ত ট্রেনে। কিন্তু ভারী বাঁককে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে বেশির ভাগ লড়াইতে জিতেছে ‘বাঁকওয়ালা’রাই। তাঁদের দাপাদাপিতে বিশেষ করে সাধারণ কামরায় ওঠা মহিলা নিত্যযাত্রীদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। রেল কর্তৃপক্ষ সব জেনেও দর্শক হয়ে থাকে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

বছরের ওই সময়টায় ঠিক কী করে রেল পুলিশ বা রেল রক্ষী বাহিনী? রাতের ট্রেনে কেন বেশি সংখ্যায় নিরাপত্তা কর্মী দেওয়া যায় না? কেনই বা টিকিট কেটে ট্রেনে উঠে নেশাগ্রস্তদের অত্যাচার সইতে হবে সাধারণ যাত্রীদের?

রেল পুলিশের এক পদস্থ কর্তা দাবি করছেন, তাঁরা ওই তিন মাস তো বটেই বছরের অন্য সময়েও রাতের ট্রেনের কামরায় নিয়মিত নজরদারি করেন। প্রকাশ্যে গাঁজা-মদের নেশা করে যারা, তাদের গ্রেফতারও করা হয়। যদিও তিনি মানছেন, “ওই সময়ে রাতেও প্রচুর মানুষ ট্রেনে চড়ে। সবার ব্যাগ তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। রেল পুলিশের সেই পরিকাঠামো নেই।’’ রেল কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, নেশা করার অপরাধে যাদের ধরা হয়, তাদের অনেকেই জামিন পেয়ে ফের একই অপরাধ করে।

তারকেশ্বর শিব মন্দিরের পুরোহিতমণ্ডলীর সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নেশাগ্রস্ত বাঁকওয়ালাদের জন্য রাতের ট্রেনে যাত্রীদের হেনস্থার খবর শুনেছি। শিব উপাসনার নামে নেশাগ্রস্ত হয়ে অন্য মানুষের উপরে অত্যাচার সমর্থনযোগ্য নয়। ওটা তা হলে উপাসনা থাকে না।’’

gautam bandopadhyay train rail liquor drug southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy