Advertisement
E-Paper

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে শৌচাগার, অনিয়মের নজির বিস্তর

ওয়েবসাইট বলছে এক কথা। উল্টো ছবি গ্রামে! কেন্দ্র সরকারের স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ)-এর ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের কুমারিয়া গ্রামের কোলেপাড়ার বাসিন্দা দিলীপ কোলের নাম। ওয়েবসাইট বলছে, দিলীপবাবু কেন্দ্রীয় প্রকল্পে শৌচাগার পেয়েছেন।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৬
শৌচাগারের জন্য টাকা বরাদ্দ হলেও কাজ কিছুই হয়নি ।

শৌচাগারের জন্য টাকা বরাদ্দ হলেও কাজ কিছুই হয়নি ।

ওয়েবসাইট বলছে এক কথা। উল্টো ছবি গ্রামে!

কেন্দ্র সরকারের স্বচ্ছ ভারত মিশন (গ্রামীণ)-এর ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের কুমারিয়া গ্রামের কোলেপাড়ার বাসিন্দা দিলীপ কোলের নাম। ওয়েবসাইট বলছে, দিলীপবাবু কেন্দ্রীয় প্রকল্পে শৌচাগার পেয়েছেন। অথচ, গ্রামে তাঁর বাড়ির পাশে এত দিনে আড়াই ফুট লম্বা, আড়াই ফুট চওড়া এবং ছ’ফুট উঁচু একটি ঘর তৈরি হয়েছে। মাথায় টিনের ছাউনি। ভিতরে প্যান বসানো। পাশে দু’টি সেপটিক ট্যাঙ্ক। সেই ঘরে মজুত হচ্ছে খড়ের আঁটি! কারণ, সেপটিক ট্যাঙ্কের সঙ্গে প্যানকে নল দিয়ে যুক্ত করা হয়নি।

ওয়েবসাইট শৌচাগার প্রাপকের তালিকায় রেখেছে ওই গ্রামের বাবু কোলে, খোকন কোলে এবং উদয় কোলেকেও। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, পাশাপাশি তিনটি শৌচাগারের মেঝে পর্যন্ত হয়েছে। বাকি কাজের জন্য পাশেই ডাঁই করে রাখা হয়েছে ইট। তাতে শ্যাওলা। তিনটি টিনের দরজা তিন দিকে ঘিরে আড়ালে রান্না করছেন মহিলারা।

উদয় বলেন, ‘‘কিছু বালি আর সিমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। তাতে এইটুকু কাজ নিজেরা করেছি। প্রায় এক বছর হল, আমরা শুধু ইট পেয়েছি। বালি, সিমেন্ট কিছুই পাইনি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে গিয়ে কোনও উত্তর পাইনি। অথচ আমরা তিন ভাই মিলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তিনটি শৌচাগারের জন্য ২৭০০ টাকা তুলে দিয়েছি।’’

শুধু কোলেপাড়া নয়, স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গোটা রসপুর জুড়েই। কোনও পরিবারের দু’টি শৌচাগার পাওয়ার কথা, হয়েছে অর্ধেক। কারও আবার প্রাপকের তালিকায় নামই নেই! কেউ আবার টাকা জমা দিয়েও শৌচাগার পাননি। এ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা।

আবার শৌচাগারের ঘর তৈরি হলেও অন্যান্য কাজ না হওয়ায় তা এখন খড় রাখার জায়গা।

মঙ্গলবার হাওড়ার আমতার রসপুর পঞ্চায়েতে দেখা গিয়েছে এমনই ছবি।—সুব্রত জানা।

কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পে একটি শৌচাগার তৈরির জন্য মোট ১০ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ। এর মধ্যে প্রাপকের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৯০০ টাকা। ৬০০০ টাকা দেয় কেন্দ্র। রাজ্য সরকার দেয় ৪০০০ টাকা। প্রকল্পে টিনের চালের একটি ৯ বর্গফুটের পাকা ঘর এবং দু’টি সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি হওয়ার কথা। সাধারণত শৌচাগার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। অনেক সময় প্রাপক নিজেও তা তৈরি করে নিতে পারেন। তবে, রসপুর পঞ্চায়েতে শৌচাগার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমতারই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। কাজটি তদারকি করার কথা ব্লক প্রশাসনের। স্থানীয় ভাবে তদারক করার কথা গ্রাম পঞ্চায়েতের। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে শৌচাগার প্রাপকদের নামের তালিকা কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ব্লক প্রশাসনের।

২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে রসপুরের মোট ৪২৪ জন শৌচাগার প্রাপকের তালিকা সম্প্রতি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। অর্থাৎ, এই ৪২৪ জন শৌচাগার পেয়ে গিয়েছেন। ৩২৯টি শৌচাগারের জন্য স্বেচ্ছেসেবী সংস্থা প্রাপ্য টাকাও পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তব যে অন্য ছবি দেখাচ্ছে!

রসপুরে শৌচাগার তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে অর্চিতা বসু অনিয়মের দায় ব্লক প্রশাসনের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ব্লক প্রশাসনের খামখেয়ালিপনার জন্যই সব কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে আছে। কুমারিয়া গ্রামে যখন কাজ করছি, তখন আমাদের অন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, কোলেপাড়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।’’ বিডিও লোকনাথ সরকার বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেব।’’ পঞ্চায়েত প্রধান আলোকলতা মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজের বরাত দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। তাদেরই তো এ সব দেখার কথা। আমাদের কোনও দায় নেই।’’

ইতিমধ্যেই এই ‘অনিয়ম’-এর অভিযোগ তুলে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবিতে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছে সিপিএম। বিজেপি-র হাওড়া (গ্রামীণ) জেলার সভাপতি অনুপম মল্লিকের অভিযোগ, গোটা জেলা জুড়েই ওই প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন বলেও জানিয়েছেন।

Toilet Government Construction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy