Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বন্ধুরা, বলছে পুলিশ

আত্মহত্যা নয় খুন হয়েছে সায়র, দাবি বাবা-মা’র

জন্মদিনে বন্ধুর সঙ্গে ‘একটু আসছি’ বলে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের মাহেশের বাসিন্দা সায়র কর। ওই দিন রাতে রিষড়ায় রেল লাইনের ধারে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত সায়রের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিবার। ছবি: প্রকাশ পাল।

মৃত সায়রের (ইনসেটে) শোকার্ত পরিবার। ছবি: প্রকাশ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

জন্মদিনে বন্ধুর সঙ্গে ‘একটু আসছি’ বলে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের মাহেশের বাসিন্দা সায়র কর। ওই দিন রাতে রিষড়ায় রেল লাইনের ধারে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আগামীকাল, বুধবার চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সায়রের। তার আগে তাঁর মৃত্য ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ছেলের দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই রেল পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে‌ন সায়রের বাবা। সোমবার রাত পর্যন্ত অবশ্য অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়নি।

তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, মৃতদেহ দেখে মনে হয়েছে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে সায়রের। তবে এটা দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা, নাকি ট্রেনের সামনে তাঁকে ফেলে দিয়ে খুন করা হয়েছে, তা তদন্তসাপেক্ষ। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। বাড়ি ফিরতে হলে সায়রের শ্রীরামপুর অথবা রিষড়া স্টেশনে নামার কথা। কিন্তু কী কারণে তিনি রিষড়া স্টেশন থেকে কোন্নগরের দিকে এগিয়ে গেলেন, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

সায়রের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জুন মাসে বিধাননগরের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে বিসিএ (ব্যাচেলর অব কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন) করেন তিনি। এর পরে কলকাতারই একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরির প্রশিক্ষণ নেন। আগামী বুধবার চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাইশতম জন্মদিন ছিল। ওই দিন সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা সুরজিৎ বণিক ন‌ামে এক বন্ধু তাঁর বাড়িতে আসেন। এর পরে সুরজিতের স্কুটিতে চেপে সায়র বেরিয়ে যান। কয়েক ঘণ্টা পরে দু’জনে ফিরেও আসেন। সায়রের মা কাকলিদেবী জানান, ওরা ফিরে আসার পর ছেলের মোবাইলে দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা বিশাল বৈঠা নামে এক বন্ধুর ফোন আসে। বিশালের পড়শি এক বান্ধবীরও (দু’জনেই সায়রের ফেসবুকের বন্ধু। সেই সূত্রে সুরজিতেরও বন্ধু ছিলেন তাঁরা) ফোন এসেছিল। দুপুর দু’টো ন‌াগাদ সুরজিত এবং সায়র খাওয়া সেরে বিশালের বাড়িতে যাবে বলে বেরিয়ে যায়। রাত ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ তিনি ছেলের মোবাইলে ফোন করলে সে জানায় দমদম ক্যান্টনমেন্ট হয়ে চন্দননগরে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। সেখান‌ থেকে ট্রেনে ফিরছে। ভদ্রেশ্বরে আছে। কিন্তু রাত হয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় ঘণ্টাখানেক বাদে তিনি ফের ছেলের মোবাইলে ফোন করেন। তখন মোবাইলটি ‘সুইচড অফ’ ছিল।

পুলিশ সূত্রে খবর, পর দিন সকালে সায়রের বাড়ির লোকজন সুরজিতের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে সে জানায়, আগের দিন দুপুরে সায়রকে বালিঘাট স্টেশনে নামিয়ে সে বাড়ি চলে গিয়েছিল। এরপর সায়রের বাবা শেওড়াফুলি জিআরপিতে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে তাঁকে জানানো হয়, আগের রাতে রিষড়ায় লাইনের ধারে এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। শেওড়াফুলি জিআরপি-তে গিয়ে ছেলের দেহ শনাক্ত করেন রতনবাবু।

ছেলেকে খুন করা হয়েছে সন্দেহে শনিবার সুরজিৎ ও বিশালের বিরুদ্ধে শেওড়াফুলি জিআরপি-তে এফআইআর করেন রতনবাবু। তার ভিত্তিতে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ। সুমন দাস নামে সায়রের এক বন্ধু রতনবাবুকে জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ সায়র চন্দননগর স্ট্রান্ড ঘাটে এসেছিলেন। তাঁরা এক সঙ্গে আইসক্রিম খান। আধ ঘণ্টা পরে সায়র অটোয় চলে যান।

ইএসআই কর্পোরেশনের কর্মী রতনবাবুর বক্তব্য, ‘‘ছেলের কোনও খোঁজ না পেয়ে বার বার সুরজিতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু এক বারের জন্যও আসেনি। নানা কথা বলে এড়িয়ে গিয়েছে। ২৫ তারিখ দুপুরে ওরা বলে যে ‘আমাদের বাড়িতে আসছে’। কিন্তু আসেনি। সুরজিতের আচরণ অত্যন্ত সন্দেহজনক। ওকে আর বিশালকে জেরা করলেই সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।’’

রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। দেহের পাশ থেকে সায়রের মোবাইল মিলেছে। মোবাইলের কল রেকর্ড ঘেঁটে দেখা হচ্ছে।’’

কাক‌লিদেবী ব‌লেন, ‘‘ছেলে হাসিখুশি ছিল। কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না ওর মধ্যে। খামোখা আত্মহত্যা করতে যাবে কেন! ওকে খুন করা হয়েছে।’’

এ দিন বার বার ফোন করা হলেও সুরজিৎ বা বিশালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সুরজিতের মোবাইল বন্ধ ছিল। বিশালের মোবাইল ছিল ‘নট রিচেবল’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE