জোড়াতালি: ভেঙে যাওয়া বাড়ির মেরামতি চলছে। —নিজস্ব চিত্র
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষকের কাজ করে যা পেতেন, তা দিয়েই সংসার চলত দৃষ্টিহীন খোকন রায়ের। করোনা-আবহে অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন তিনি কর্মহীন। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল আমপানের তাণ্ডবে। ধারদেনা করে কোনও রকমে সেটা মাথাগোঁজার উপযুক্ত করেছেন। পাঁচলার বাসিন্দা খোকনবাবুর অভিযোগ, দু’বার আবেদন করেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ।
পাঁচলার বিকিহাকোলা পঞ্চায়েতের শ্রীনগর কলোনির বাসিন্দা প্রতিবন্ধী খোকনের সংসারে রয়েছেন তাঁর বাবা, মা ও স্ত্রী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষকের কাজ করেন। তাঁর অভিযোগ, আমপানে তাঁদের দু’টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টালির ছাউনি উড়ে যায়। দেওয়ালও ভেঙে পড়ে। ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করলেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাঁর নাম নেই বলে অভিযোগ খোকনবাবুর। তাঁর দাবি, ‘‘প্রথমবার পঞ্চায়েতে আবেদন করে ক্ষতিপূরণ পাইনি। দ্বিতীয়বার ব্লক কার্যালয়ে আবেদন করেছিলাম। তাতেও দেখলাম তালিকায় নাম নেই।’’
তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান মঞ্জুরা বেগম পুরকাইত বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনপত্রগুলি বিডিও কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তদন্তের পর সেখানেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েত তালিকা তৈরি করেনি।’’ বিডিও (পাঁচলা) এষা ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কেন ওই ব্যক্তির নাম বাদ গেল, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
অনেক জায়গার মতো পাঁচলা ব্লকেও আমপানের ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় স্বজন পোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এখানেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে বিডিও-র নেতৃত্বে চার সদস্যের টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়েছিল। তারপরেও কেন তাঁর নাম তালিকায় উঠল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোকনবাবু। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ঘরবাড়ির ক্ষতি না-হলেও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, এমন অনেক মানুষের নাম তালিকায় আছে। সকলেই যখন কুড়ি হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে, তখন ভেবেছিলাম, আমিও পাব। কিন্তু পেলাম না।’’
বেশ কিছুদিন খোলা আকাশের নীচে সপরিবারে দিন কাটিয়েছেন খোকনবাবু। তারপর ধারদেনা করে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরদু’টো কোনওরকমে মাথা গোঁজার উপযুক্ত করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম ক্ষতিপূরণ পেলে দেনা শোধ করে দেব। কিন্তু দ্বিতীয় তালিকাতেও নাম না-থাকায় চিন্তায় পড়েছি। কী করে দেনা শোধ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy