Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোট-চর্চায় দূষণও

এখানে সব প্রশ্নেই তর্ক-বিতর্ক জমে। মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? মেসি বড় না রোনাল্ডো? অমিতাভ না শাহরুখ? মমতা-মোদী তো আছেই। ভোটের দিন এগিয়ে আসছে। রাজনীতির সেই তর্কই আরও প্রবল হচ্ছে এখানে। ঠিকানা— চায়ের দোকান। আজ উত্তরপাড়া কাঁঠাল বাগান বাজারের কাকুর চায়ের দোকান। কান পাতলেন গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়এখন তো জানতে পারছি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এ সবের বিরুদ্ধে ছিল। কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতিমতো কোনও কালো টাকা ফিরল না। 

মজলিশ: তর্কের ফাঁকে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক। ছবি: দীপঙ্কর দে

মজলিশ: তর্কের ফাঁকে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক। ছবি: দীপঙ্কর দে

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

উত্তরপাড়া: শুরুতে আলোচনাটা চলছিল দু’জনের মধ্যে। বিষয়: বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় নীতি। কিন্তু চায়ের কাপ কিছুটা খালি হতেই আলোচনা ঘুরে গেল ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে। এবং এ ক্ষেত্রেও সুর মেলালেন দু’জন।

আড্ডা জমে উঠল।

তপন দাস (সমাজকর্মী): দেশটা যে কোথায় যাচ্ছে! বিজেপি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উস্কানি দিচ্ছে। যুদ্ধের জিগির তুলে জনমনকে বিভ্রান্ত করছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে। মানুষের ইতিহাস চেতনা, বিজ্ঞানচর্চাকেও মৌলবাদী পথে চালিত করতে চাইছে। এটা রোখা দরকার। দেশ জুড়ে যে দল যেখানে শক্তিশালী অর্থাৎ বিজেপিকে রুখতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার একটা চেষ্টা শুরু হয়েছিল। সেটা পুরোপুরি সফল হল না।

তপনবাবুর কথা শেষ হওয়ার আগেই জিএসটি নিয়ে তোপ জয়ন্ত দাশগুপ্তর (নাট্যকর্মী): জিএসটি থেকে মানুষ বিশেষ সুফল পেলেন না। উল্টে তা টুঁটি চেপে ধরল সব শ্রেণির মানুষকে। এরপর ঘাড়ের উপর এল নোটবন্দি। মানুষের দম একেবারে বন্ধ হওয়ার অবস্থা। পুরো কাজটাই করা উচিত ছিল পরিকল্পনামাফিক, তাড়াহুড়ো না করে। এখন তো জানতে পারছি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এ সবের বিরুদ্ধে ছিল। কেন্দ্রের প্রতিশ্রুতিমতো কোনও কালো টাকা ফিরল না।

তপনবাবুর ক্ষোভ: নতুন শিক্ষিত প্রজন্মের চাকরি নেই। চাকরিজীবীরা অদ্ভুত অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। সব সময় কী কী হয় দুশ্চিন্তা। মানুষ কর্মচ্যুতও হচ্ছেন। কয়েক বছর আগেই এ সব শুরু হয়েছিল। কিন্তু জিএসটি বা নোটবন্দির পর এখন তা মাত্রাছাড়া।

শশাঙ্ক কর (পরিবেশ কর্মী): এখন প্রায় প্রতি বছরই নিয়ম করে ভোট হচ্ছে। এখন ভোটের উপকরণ হিসেবে যা ব্যবহার হচ্ছে, তার প্রায় পুরোটাই প্লাস্টিক। হোর্ডিং, ব্যানার, পোস্টার, দলীয় পতাকা, প্রতীকে প্লাস্টিক। এর পরিমাণ কিন্তু কম নয়। মানুষ না-বুঝে অনেক সময় সে সব পুড়িয়ে ফেলছেন। যার ফলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে মানুষের। কিন্তু রাজনীতির লোকেদের পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও প্রচার নেই। ভোটের মুখে এটা কিন্তু সকলের জন্য দেখা উচিত। আগামী দিনগুলো দূষণের প্রশ্নে কিন্তু ভয়ঙ্কর।

দূষণের প্রসঙ্গেই সরব দেবাশিস দাস (নাট্যকর্মী): সাম্প্রতিক অতীতে কেরল-সহ বিভিন্ন রাজ্যে দেখা গিয়েছে ভয়ঙ্কর বৃষ্টিপাত। অথচ এখানে নদী-নালা, পুকুরে ন্যূনতম নাব্যতা নেই কোথাও। অবাধে পুকুর বোজানো হচ্ছে। হিন্দমোটরেই একটা পুকুর বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে যার আয়তন একশো একরেরও বেশি। প্রতিবাদে আদালতে গিয়েছেন একটি সংস্থার সদস্যেরা। রাজনৈতিক দলগুলি কোনও ভূমিকাই পালন করছেন না। পুকুর, জলা থাকলে কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হত।

শশাঙ্ক কর: আমাদের জীবনে অপ্রাপ্তি প্রচুর। আধপেটা খাওয়ায় অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আর কিছুই চাই না। শুধু চাই শান্তিতে বাস করতে। যে রাজনীতি মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করে আমরা সেই রাজনীতি চাই না।

জয়ন্ত দাশগুপ্ত: এই বসন্তে সব রং মিলেমিশে মানুষ আনন্দে থাকুক। এটাই সবাই চাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE