Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের পরে হিংসা বাড়ছে আরামবাগে

আরামবাগ, খানাকুলের পর এ বার গোঘাটে এবং পুরশুড়াতেও তৃণমূল-বিজেপি হানাহানি শুরু হল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:০৭
Share: Save:

‘ট্র্যাডিশন’-এ ছেদ পড়েছিল শুধু ভোটের সময়ে। কিন্তু ভোট-পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার চেনা ছবিটা এ বারও ফিরছে আরামবাগে।

আরামবাগ, খানাকুলের পর এ বার গোঘাটে এবং পুরশুড়াতেও তৃণমূল-বিজেপি হানাহানি শুরু হল। বুধবার রাতে গোঘাটের শ্যাওড়াতে শ্রীরাম খাঁ নামে এক বিজেপি কর্মীকে রাস্তায় ঘিরে লাঠি-বাঁশ দিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁর সঙ্গে থাকা মানসিক ভারসাম্য ছেলেকেও চড়-থাপ্পড় মারা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। গুরুতর আহত শ্রীরামকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই রাতেই পুরশুড়ার সোদপুর, মসিনান এবং রাউতারায় দুই দলের মধ্যে লাঠালাঠি হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার খানাকুলের মুচিপাড়া সেতুর কাছে বিজেপি নেতা জানকীনাথ আদক প্রহৃত হন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ক্ষেত্রেও তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।

গত সোমবার ভোট চলাকালীন গোটা মহকুমায় তেমন হিংসার নজির নেই। মানুষ সকাল থেকে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। বুথ জ্যাম, রিগিং, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগও তেমন নেই। যে দু’একটি ছোটখাটো অশান্তি হয়েছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। ভোটাররা মানেন, প্রায় দু’দশক বাদে এমন ‘শান্তির ভোট’ হয়েছে আরামবাগে। বিরোধীরাও রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ তোলেনি। নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, সে দিন রাজ্যের যে সাতটি কেন্দ্রে ভোট হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে আরামবাগেই। ৮৩.৪১%। কিন্তু এই ‘শান্তির আবহ’ স্থায়ী হয়নি। ভোট মিটে যাওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক হিংসার চেনা ছবিটাই ফিরতে শুরু করে আরামবাগে। বিরোধী বনাম শাসক তো রয়েছেই, তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলও বেআব্রু হয়েছে সংঘর্ষের ঘটনায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়িতে ছাউনি দেওয়ার জন্য ট্রলিতে অ্যাসবেসটস চাপিয়ে বুধবার রাতে ফিরছিলেন গোঘাটের শ্যাওড়া গ্রামের বিজেপি কর্মী শ্রীরাম। সঙ্গে ছিল ছেলে। শ্যাওড়া পঞ্চায়েত অফিস পার হয়ে গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় পিচ রাস্তায় তাঁদের পথ আটকে বিজেপি করার ‘অপরাধে’ তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ।

শ্রীরাম বলেন, ‘‘বিশ্বনাথ কারক আমাদের নেতা। তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোকই বিজেপিতে যোগ দেন। শ্যাওড়ার বুথগুলিতে হার নিশ্চিত জেনেই তৃণমূলের এই হামলা।” বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল সংযত না-হলে গ্রামবাসীই তাদের গ্রামছাড়া করবেন।”

হামলায় জড়িত অভিযোগে শ্রীরাম শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য উল্লাস দলুই এবং ওই দলের অঞ্চল নেতা নওসের আলি, রমণী সাঁতরা-সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, তদন্ত হচ্ছে। অভিযুক্তেরা পলাতক।

তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য উল্লাস। তাঁর দাবি, “ঘটনাস্থলে আমি বা দলের কেউই ছিলেন না। পাড়াগত ঝগড়া-মারপিটে আমাদের মিথ্যা জড়ানো হয়েছে।” একই সুরে গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদারেরও দাবি, “গ্রামে পারিবারিক অশান্তি নিয়ে বিজেপি মিথ্যা রাজনীতি করছে।”

সোমবার রাত থেকেই পুরশুড়ার হাটি, মসিনান, সোদপুর, রাউতাড়া, চিলাডাঙি প্রভৃতি গ্রামে দু’দলের মধ্যে উত্তেজনা, হুমকি চলছিল। বুধবার রাতে সোদপুর, মসিনান এবং রাউতারায় দুই দলের লাঠালাঠিতে কেউ অবশ্য আহত হননি। এলাকায় পুলিশ যায়। তবে থানাতে কোনও পক্ষ অভিযোগ জানায়নি। অবশ্য ভোটের দিনে সোদপুরের দুই তৃণমূল নেতাকে মারধরের অভিযোগে বুধবার রাতে সাত বিজেপি কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ নিয়ে বিজেপির আরামবাগ জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “সব জায়গায় আমাদের ছেলেদের তৃণমূল মারধর করছে এবং মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এটা চলতে দেওয়া যাবে না।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, আরামবাগে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব ক্ষেত্রেই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Political Violence Arambag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE