Advertisement
১১ মে ২০২৪
Ration Cards

আবেদনেও মেলেনি কার্ড, অমিল রেশন

লকডাউন পরিস্থিতিতে রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়া হচ্ছে। গত ১ মে থেকে কার্ডপিছু অতিরিক্ত ৫ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০৩:০৯
Share: Save:

ট্রেনে গান করা পেশা বৈদ্যবাটীর জয় রায়ের। তাঁর ডিজ়িটাল রেশন কার্ড নেই।

গোঘাটের বদনগঞ্জের অণিমা মালিক গৃহসহায়িকা। বাড়ির ছ’জনের মধ্যে মাত্র এক জনের ডিজ়িটাল রেশন কার্ড হয়েছে। গত পাঁচ বছরে আর কারও হয়নি।

বলাগড়ের ঢাকছড়া গ্রামের দিনমজুর বৃন্দাবন ঘোষ এবং শ্রীরামপুর শহরের বাসিন্দা, পেশায় গেঞ্জি কারখানার শ্রমিক হাবু রায়ও ডিজ়িটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কার্ড পাননি।

হুগলি জেলা জুড়ে এমন বহু মানুষ আছেন, লকডাউনে যাঁদের সংসার চালাতে হাত পাততে হচ্ছে।

অথচ, ডিজ়িটাল কার্ড না থাকায় রেশনের খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছেন না। কোন প্রক্রিয়ায় রেশন মিলবে, অনেক ক্ষেত্রে তার স্পষ্ট উত্তরও মিলছে না বলে অভিযোগ।

লকডাউন পরিস্থিতিতে রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়া হচ্ছে। গত ১ মে থেকে কার্ডপিছু অতিরিক্ত ৫ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন আশ্বাস দেয়, যাঁদের ওই কার্ড নেই, তাঁদের কুপন দেওয়া হবে। সেই কুপনের বিনিময়ে তাঁরা চাল-গম তুলতে পারবেন। কিন্তু বহু মানুষ রয়ে গিয়েছেন, যাঁরা আবেদন করেও ডিজ়িটাল রেশন কার্ড পাননি, আবার কুপনও পাচ্ছেন না। ফলে, রেশনও মিলছে না।

সমস্যার কথা শুনে জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী বলেন, “কেউ আবেদন করেও কার্ড না-পেলে আবেদনপত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যাঁদের কার্ড নেই, আবার কুপনও পাননি তাঁদের কী হবে? জেলা প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, তাঁরা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভা থেকে ত্রাণের চাল পাবেন।

বৈদ্যবাটী কাজিপাড়ার তারক নাগা জানান, পাঁচ মাস আগে তিনি ডিজ়িটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কার্ড পাননি। তিনি বলেন, ‘‘টোটো চালাই। এখন আয় নেই। রেশন দোকান, স্থানীয় কাউন্সিরলরের কাছে গিয়েছি। সুরাহা মেলেনি।’’ ট্রেনের গায়ক জয় রায় বলেন, ‘‘কার্ড নেই বলে চাল-গম পাচ্ছি না। ত্রাণও পাইনি। চেয়েচিন্তে আর মাঠ থেকে শাক-পাতা তুলে চলছে।’’ কোথায় রেশন কার্ড অথবা চাল মিলবে, সেই ঠিকানাই খুঁজছেন শ্রীরামপুরের বাসিন্দা হাবু রায়ের স্ত্রী হেমা। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে রেশনের চাল খুব দরকার।’’

কয়েক বছর আগে আবেদন করেও কার্ড মেলেনি এবং কুপনও দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগে সম্প্রতি গোঘাট-২ ব্লকের বিডিও-কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান ভুক্তভোগী মানুষজন। শ্রীরামপুরের অর্জুনকুমার ধর ২০১৮ সালে ডিজ়িটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। কার্ড পাননি। সম্প্রতি ওয়েবসাইটে দেখেন, কার্ড ‘ডেলিভার্ড’ অর্থাৎ দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে লেখা দেখাচ্ছে। তিনি রেশন অফিসে বিষয়টি জানান। দৌড়ঝাঁপের পরে মঙ্গলবার ওই দফতর থেকে তিনি নতুন কার্ড হাতে পেয়েছেন।

কার্ডহীন, কুপনহীন গরিব মানুষের সংখ্যাটা হুগলিতে নেহাত কম নয়। রেশন দোকান থেকে তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। এই ‘বঞ্চনা’র অভিযোগে দিন কয়েক আগে জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেয় আরএসপি। দলের জেলা সম্পাদক মৃন্ময় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সরকারি ঘোষণা সত্বেও বহু গরিব বা রোজগার হারানো মানুষ রেশন পাচ্ছেন না। হন্যে হয়ে তাঁরা রেশন দোকান, কাউন্সিলরের বাড়ি ছুটছেন। সরকার যা বলছে, তাতে গরিব মানুষের হাড়ির চাল রেশনে রাখা আছে। কিন্তু বাস্তবটা হচ্ছে, অনেকেরই হাঁড়ি চাপছে ত্রাণে পাওয়া চালে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তব সমস্যাটা প্রশাসন দেখুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ration Cards Digital Ration Cards
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE