Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শুধুই মিটিং আর মাপজোক, মুখ দেখল না সিল্কপার্ক

বড় মুখ করে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘটা করে শিলান্যাসের পরিকল্পনাও হয়েছিল। মিলেছিল কর্মসংস্থানের আশ্বাস। প্রশাসনিক স্তরে মিটিং আর জমি মাপামাপি ছাড়া বাস্তবে অবশ্য কিছু হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৭
Share: Save:

বড় মুখ করে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘটা করে শিলান্যাসের পরিকল্পনাও হয়েছিল। মিলেছিল কর্মসংস্থানের আশ্বাস। প্রশাসনিক স্তরে মিটিং আর জমি মাপামাপি ছাড়া বাস্তবে অবশ্য কিছু হয়নি। শ্রীরামপুরে সিল্ক পার্কের পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন মানুষজন। ‘নিন্দুকে’রা বলছেন, এ আসলে শিল্পহীন রাজ্যে তৃণমূলের ফাঁকাবুলি।

শ্রীরামপুরের মাহেশ মৌজায় (চাঁপদানি বিধানসভা) ৫০ একরেরও বেশি জমিতে ওই শিল্পতালুক তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, শ্রীরামপুর এবং বৈদ্যবাটি পুর-এলাকায় সিল্ক প্রিন্টের শ’দুয়েক ছোটবড় কারখানা রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার লোক ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত। শিল্পতালুক গড়ে সকলকেই এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পের শিলান্যাস হবে বলে রাজ্যের প্রশাসনিক ক্যালেন্ডারে ঘোষণা করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বেশ কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ওই হাব তৈরি করা হবে। ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রার কথাও জানানো হয়। কিন্তু কিছুই হয়নি। পরে অবশ্য জানানো হয়, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দফতর নয়, ওই জায়গায় ‘সিল্ক অ্যান্ড হ্যান্ডলুম পার্ক’ গড়বে শিল্পন্নয়ন নিগম। শিল্প বাণিজ্য দফতরে এ নিয়ে বৈঠকও হয়।

শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, রাজ্যধরপুর, তালপুকুর, বৈদ্যবাটি পুরসভার বৌবাজার, চাতরা মান্নাপাড়া, নওগাঁ-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিল্ক প্রিন্টিংয়ের কারখানা আছে। হাজার দশেক মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে এখানে কাজ হয়। আধুনিক ধারণার অভাবে এখানকার তৈরি কাপড় বাজারে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অধিকাংশ কারখানা থেকে এলাকায় দূষণ ছড়ায়। কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রং এবং রাসায়নিক নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়। ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়ায়। সে জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে শ্রীরামপুরকে শিল্পের নতুন ঠিকানা হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। পরিকল্পনা হয় শিল্পকাজের প্রদর্শনীর জন্য অডিটোরিয়াম, গেস্ট হাউস তৈরির কথাও বলা হয়। তন্তুজ, মঞ্জুষা বা খাদির মতো সংস্থা এখানে কাজ করাতে পারবে। বাইরের বাজারে এ রাজ্যের শিল্পের কদর বাড়বে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য খালি চোখে কিছুই দেখা যায়নি। সরকারের বক্তব্য ছিল, ওই শিল্পতালুক হলে দূষণের মাত্রা কমবে। দূষণ এড়াতে বিশেষ পদ্ধতিতে বর্জ্য নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করা হবে। বাড়ির কারখানাগুলি শিল্পতালুকে চলে আসবে।

সিল্ক প্রিন্টিংয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, সরকারের পরিকল্পনার কথা শুনে তাঁরা খুশিই হয়েছিলেন। এখন অবশ্য এই শিল্পতালুকের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরাও সন্দিহান। চাঁপদানির কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নান বা শ্রীরামপুরের কংগ্রেস প্রার্থী শুভঙ্কর সরকার বলছেন, ‘‘শি‌ল্পের প্রশ্নে তৃণমূল সরকার পাশ মার্ক পাবেন না। সিল্কপার্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।’’ শ্রীরামপুর সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চিফ এগজিকিউটিভ, তৃণমূল ন‌েতা পিনাকী ভট্টাচার্য থেকে দলের স্থানীয় নেতা পিন্টু নাগ অবশ্য বলেন, ‘‘ভোটের জন্য কাজ কিছুটা দেরি হল। তবে ওখানে সিল্ক পার্ক গড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’ চাঁপদানির বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী মুজফফর খান দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অত্যন্ত ‘সিরিয়াস’। এই শিল্পের উৎকর্ষের জন্য যা যা দরকার, সব চেষ্টাই করা হবে।

চেষ্টা কবে বাস্তবে রূপ পায়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Silk Park Measurement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE