Advertisement
E-Paper

মানসিক ভারসাম্যহীনকে পিটল ‘অমানবিক’ পুলিশ

জনতার তাড়া খেয়ে পাতকুয়োয় পড়ে গিয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধ ভবঘুরে। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁকেই রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাল পুলিশ। শেষে হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে, টেনেহিঁচড়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল পুলিশের জিপে তুলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫৭
মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকে ‘শায়েস্তা’ করতে এ ভাবেই লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন রক্ষকেরা।

মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকে ‘শায়েস্তা’ করতে এ ভাবেই লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন রক্ষকেরা।

জনতার তাড়া খেয়ে পাতকুয়োয় পড়ে গিয়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধ ভবঘুরে। তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁকেই রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাল পুলিশ। শেষে হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে, টেনেহিঁচড়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল পুলিশের জিপে তুলে।

বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠল হাওড়া শহরের ডবসন রোডে।

কী ঘটেছিল এ দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কিছু দিন ধরেই হাওড়া স্টেশন থেকে খানিক দূরে ডবসন রোড এলাকায় ভবঘুরে চেহারার ওই বৃদ্ধকে ইতস্তত ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছিল। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ওই বৃদ্ধ পথচারীদের গায়ে হঠাৎ থুতু দিতে শুরু করেন। এতে এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বৃদ্ধের দিকে তেড়ে গেলে তিনি তাঁদের লক্ষ করে ইট ছুড়তে শুরু করেন। এই ঘটনায় ডবসন রোড জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পথচারীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পালাতে গিয়ে গলির ভিতরে একটি মোটর গ্যারাজের পাশে অরক্ষিত কুয়োর মধ্যে পড়ে যান ওই বৃদ্ধ।

পুলিশ জানায়, কুয়োয় জল কম থাকায় বৃদ্ধ ডুবে যাননি। তাই প্রথমে পুলিশই তাঁকে উপরে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু না পারায় দমকলকে খবর দেওয়া হয়। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে দড়ি, মই নামিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তিকে পাতকুয়ো থেকে তোলার পরেই তিনি ‘হিংস্র’ আচরণ করতে শুরু করেন। পুলিশকর্মীদের গলা টিপে ধরার চেষ্টা করেন। গায়ে থুতু দিতে থাকেন। ফের ইট নিয়ে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, এর পরেই পুলিশ ওই বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারতে শুরু করে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বৃদ্ধ লাঠির আঘাতে মাটিতে পড়ে গেলেও পুলিশকর্মীরা ক্ষান্ত হননি। রাস্তায় ফেলেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তার পরে জিপে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। সেখানে ভবঘুরেদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডে তাঁকে ভর্তি করা হয়।

এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এখানে পুলিশের রাজ চলছে। সরকার পুলিশকে কোনও কিছুই বলে না। এক জন মানসিক রোগী, তাঁর হাতে-পায়ে এ ভাবে দড়ি বাঁধা যায় না। এটা সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।’’

এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় দুবে বলেন, ‘‘আমরা ওই ব্যক্তিকে ধরতে বলেছিলাম ঠিকই। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে এ ভাবে মারধর করা পুলিশের ঠিক কাজ হয়নি। এই অমানবিক কাজের তীব্র প্রতিবাদ করছি।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু মারধরই নয়, ওই বৃদ্ধকে হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে জিপে তোলা হয়েছিল।

কিন্তু পুলিশের এ হেন আচরণের কারণ কী? হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি খুব হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর ছোড়া ইটের আঘাতে সাত জন স্থানীয় বাসিন্দা আহত বলে অভিযোগ জমা পড়েছিল। পুলিশকেও আক্রমণ করেন তিনি। তখনই লাঠি দিয়ে তাঁকে আটকে হাত-পা বাঁধতে হয়। এক জন অফিসার ও দু’জন কনস্টেবল গিয়েছিলেন। তবে রাস্তায় ফেলে পেটানোর অভিযোগ সত্যি নয়।’’

—নিজস্ব চিত্র।

Mental patient police kolkata hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy