Advertisement
E-Paper

কম্বল মুড়ে জেলে লুকোনোর চেষ্টা নেপুর

র্তমান সুপার বিনোদ কুমার সিংহ সম্প্রতি রায়গঞ্জ থেকে বদলি হয়ে আসেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি কয়েদিদের কাছে মোবাইল রাখা বন্ধ করে দেন।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৬
অকুস্থল: জখম ডেপুটি জেলর বিশ্বরূপ সিংহ এবং বন্দি (বাঁ ও ডান দিকে)।

অকুস্থল: জখম ডেপুটি জেলর বিশ্বরূপ সিংহ এবং বন্দি (বাঁ ও ডান দিকে)।

লঙ্কা-কাণ্ডের ‘নায়ক’ খুঁজতে হুগলি জেলে ঢুকে গলদঘর্ম হল পুলিশ! কোথায় নেপু?

বুধবার রাতে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে জেলের গেট, ক্যান্টিন, পাঠাগার। দমকল জল ছিটোচ্ছে। র‌্যাফ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাচ্ছে। তার মধ্যেই জেলে তাণ্ডবের ‘মাথা’, হুগলি শিল্পাঞ্চলের ত্রাস নেপু গিরিকে খুঁজছিল পুলিশ। জেলের এক প্রান্তে একটি সেলে বেশ কিছু কয়েদিকে পরস্পরের উপরে শুয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। কয়েদিদের সরাতেই পুলিশ থ! সকলে শুয়ে ছিল একটি কম্বলের উপরে। সেই কম্বলের নীচে ঘাপটি মেরে রয়েছে নেপু!

র‌্যাফের মারের ভয়ে নেপু নিজেকে আড়াল করতে ওই কীর্তি করে বলে মনে করছেন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার রাতে ওই জেলে তাণ্ডবের রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে। বৃহস্পতিবার সকালে ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্ত চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমারকে নিয়ে জেল পরিদর্শনে যান। ফের গোলমালের আশঙ্কায় কয়েদিদের একটা বড় অংশ আর ওই জেলে থাকতে না-চেয়ে অরুণবাবুদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশ তাদের বাগে আনে। অরুণবাবু বলেন, ‘‘বিধিবদ্ধ তদন্তের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।’’

নেপু ও তার কয়েকজন শাগরেদ ছিল কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে। বুধবার তাদের চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের জেল-হাজতের নির্দেশ দেন। নেপুদের হুগলি জেলে আনা হয়। তার পর বিকেলে ওই কাণ্ড। কিন্তু কেন ওই ঘটনা?

তদন্তে ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্ত।

জেল সূত্রের খবর, বর্তমান সুপার বিনোদ কুমার সিংহ সম্প্রতি রায়গঞ্জ থেকে বদলি হয়ে আসেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি কয়েদিদের কাছে মোবাইল রাখা বন্ধ করে দেন। কিন্তু বুধবার বিকেলে জেলে আদালত ফেরত আসামিদের ‘রুটিন’ তল্লাশির সময়ে নেপুর কাছে মোবাইল মেলে। তা নিয়ে নেওয়াতেই নেপুর গোঁসা হয়। নেপু ও তার দলবল ডেপুটি জেলার বিশ্বরূপ সিংহে‌র উপুরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বিশ্বরূপবাবুর অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। ওই রাতে শুধু বিশ্বরূপবাবুর উপর চড়াও হয়েই থামেনি নেপু ও তার দলবল। জেলের প্রধান ফটক, রান্নাঘর এবং পাঠাগারেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের এক তদন্তকারী অফিসার জানান, নেপুর দলবল কারারক্ষীদের মারধর করে প্রথমে সব চাবি কেড়ে নেয়। ভাঙচুর চালায় বিশ্বরূপবাবুর অফিস এবং মহিলা-কয়েদিদের সেলাই-ঘরেও। পুলিশকে লক্ষ করেও ইট ছোড়া হয়। শেষমেশ পুলিশ এবং র‌্যাফ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই সময় নেপুরা মহিলা সেলের ভিতরে লুকনোর চেষ্টা করেছিল। তবে, মহিলা কয়েদিরা রুখে দাঁড়ায়।

এই ঘটনায় ওই জেলের নিরাপত্তা নিয়ে ফের বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। বছর দেড়েক আগেও সেখানে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছিল নেপুদের বিরুদ্ধে। গত বছরের শেষ দিকে দিন কয়েকের ব্যবধানে দুই কয়েদি পালিয়েছিল। দু’জনকেই অবশ্য পরে ধরা হয়। তার পরে বুধবারের তাণ্ডব। কারা দফতরের কর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজআরও বাড়ল।


ছবি: তাপস ঘোষ

Nepu Giri Miscreant Jail Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy