মেসি যুবভারতীতে। আর তিনি ঘরে! ভাবতেই পারছেন না শেখ রিয়াজুল। রথ দেখা তো হলই না, প্যাটিস বেচাও না!
কলকাতায় জমায়েত বা ভিড়ের খবর পেলেই রিয়াজুল চলে যান প্যাটিসের বাক্স কাঁধে। এতদিন তেমনই করেছেন। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বাইরেও প্যাটিস বেচার ভাবনা ছিল তাঁর। কিন্তু গত রবিবার ব্রিগেডে গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে প্রহৃত হন হুগলির আরামবাগের পূর্ব কেশবপুরের ওই প্রৌঢ়। তা নিয়ে শোরগোল কম হয়নি। ধৃত তিন জন জামিন পেয়ে গিয়েছে বলে শুনেছেন। উদ্বেগ কাটেনি। তাই আর মাঠমুখো হননি। শরীরও ভাল নেই।
রিয়াজুল বলেন, ‘‘যুবভারতীর ২ নম্বর গেটের বাইরে বসার কথা হয়েছিল ফেরিওয়ালা বন্ধুদের সঙ্গে। মেসির অনেক খেলা দেখেছি। ভেবেছিলাম, কপালে থাকলে ওঁকে এক ঝলক কোনও ভাবে দেখতে পাব। কিন্তু ব্রিগেডের ঘটনার জন্য মনমেজাজ খারাপ থাকায় যাইনি। মেসির অনুষ্ঠানেও গোলমাল হয়েছে, শুনেছি।’’
দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা প্রৌঢ় জানান, হকারদের মধ্যে বাছবিচার নেই। গত ২২ বছর ধরে পুজো-পার্বণ, খেলা, মেলা, সভা-সহ যাবতীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে হিন্দু-মুসলিম অনেক বন্ধু মিলে এক সঙ্গে হকারি করে তাঁরা পেট চালান। তাঁর সংযোজন, ‘‘ব্রিগেডে নাম জিজ্ঞাসা করায় বলেছিলাম। তার পরে জনা কুড়ি লোকের হাতে চড়-চাপড় খেতে হবে, ভাবিনি!’’
রিয়াজুল মেটিয়াবুরুজে ভাড়া থাকেন। প্যাটিস বেচার পাশাপাশি, বেকারিতে কাজ করেন। এক-দু’সপ্তাহ অন্তর আরামবাগে ফেরেন। ব্রিগেডের ঘটনার পরের দিন তিনি ফ্যান্সি মার্কেট এবং ইডেন গার্ডেন্সের সামনেও বিক্রিবাটা করেন। মঙ্গলবার খবর পান, ওই ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে ধরেছে। বুধবার বাড়ি চলে আসেন।
কলকাতায় প্যাটিস বেচতেন রিয়াজুলের বাবা শেখ জয়নাল আবেদিনও। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। ছেলে মনমরা হয়ে আছে।’’ রিয়াজুলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের ক্ষোভ, ‘‘ফেরিওয়ালার কি মাথায় থাকে, কোথায় চিকেন প্যাটিস নিয়ে যাওয়া যাবে না! মারধর না করে সরে যেতে বললেই হত।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)