বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা-সহ বিভিন্ন এলাকায় জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সংগঠিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০২৪-এর ৫ অগস্টের পরে লাগামছাড়া মামলা হয়েছিল। তার অধিকাংশই ভিত্তিহীন বলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রের খবর। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ থেকে প্রাক্তন পুলিশ অফিসারদের একাংশের মতে, অধিকাংশ মামালাই ভুয়ো।
শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পরে বাংলাদেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। গ্রেফতার, মামলা এবং হয়রানির মূল লক্ষ্য ছিল হাসিনার আমলের মন্ত্রী-এমপিরা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক-দরদিরা। পালাবদলের প্রায় দেড় বছর পরে দেখা যাচ্ছে, ওই মামলাগুলির বাদী, সাক্ষী ও আসামির উল্লেখযোগ্য অংশের অস্তিত্ব মেলেনি— এমন তথ্য উঠে এসেছে তদন্ত সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
মিরপুর ইসিবি চত্বরে হামলার ঘটনায় মো. আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি মামলা করেছিলেন। তিনি গুরুতর আহত দাবি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন এবং এই মামলায় আরও ২০০–২৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু তদন্তে বাদীপক্ষের ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও যোগাযোগ নম্বর— সবই ভুয়ো বলে পায় পিবিআই।
পিবিআইয়ের তদন্তে সামনে এসেছে, যে সব মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে— সেগুলিরও বড় অংশে আসামিদের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলেনি। গুলশান, তুরাগ, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, জালালাবাদ-সহ বিভিন্ন থানার বেশ কিছু মামলায় ৪৮ থেকে ৯০ শতাংশ আসামি অসত্য প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজনীতিক তথা অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘‘সাক্ষীরা জানেনও না তাঁদের কোন মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। যে ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে, সেই নিহতের পরিবারও অভিযুক্তদের চেনে না, এমন ঘটনাও বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। মামলা, সাক্ষী— সবটাই ভুয়ো। গোটা চিত্রনাট্যটা অত্যন্ত দুর্বল।’’
পিবিআইয়ের সূত্রের খবর, জুলাই-অগস্টে হত্যা-সহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১৯২টি সিআর মামলার মধ্যে ৭৮টির তদন্ত শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ মামলায় অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি, বাদী-সাক্ষীর অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি।
বাকি ৪৪ শতাংশ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হলেও তাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামি ভুয়ো। পিবিআই প্রধান মো. মোস্তফা কামাল জানান, বিভিন্ন জেলার বহু ব্যক্তিকে ঢাকার ঘটনার মামলায় আসামি করা হয়েছে, অথচ তাঁরা কখনও ঢাকাতেই আসেননি। আইনজীবীদের একাংশের মতে, ভুয়ো মামলার সংখ্যাটা পিবিআই পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ পুলিশের এক অফিসারের কথায়, ‘‘অধিকাংশ মামলা হয়েছে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি প্রতিহিংসার কারণ। তাই যে, যে ভাবে পেরেছে, মামলা করেছে। তখন অভিযোগের সত্যতা ও যুক্তিগ্রাহ্য কারণগুলিও অগ্রাহ্য করা হয়েছে।’’
তদন্ত সূত্র অনুযায়ী, বিক্ষোভের পর সারা দেশে মোট ১৭৮৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে ১০৬টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ৪৩৭টি মামলায় ২৮৩০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ-সহ আদালতে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)