নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসার। এমন সংসারে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেওয়ার উদাহরণও অনেক। কিন্তু সেই দলে নাম লেখাতে নারাজ হুগলির বাঁশবেড়িয়ার শুভঙ্কর ঘোষ। বদলে অভাবকে তুড়ি মেরেই এগিয়ে যেতে চায় সে। যার প্রথম পরীক্ষায় সে সসম্মানে উত্তীর্ণ।
মাধ্যমিকে বাঁশবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যীলয়ের ছাত্রটির প্রাপ্ত নম্বর ৬১৯। প্রত্যেক বিষয়েই লেটার মার্কস। অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান এবং ইতিহাসে নম্বর ন’য়ের ঘরে। বাংলা, ইংরেজি আর ভূগোলে আটের ঘরে। পঞ্চম শ্রেণি থেকেই বাঁশবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শুভঙ্কর। শিক্ষকদের কথায়, বরাবরই মেধাবী। মাধ্যমিকে এত ভাল ফল করার পরে আপাতত ভূগোল, অর্থনীতি আর অঙ্ক নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তে চায় শুভঙ্কর। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও তার উপায় জানা নেই শুভঙ্করের। কারণ ছোট থেকেই সে দেখে এসেছে তার পড়াশোনার জন্য কত কষ্ট করতে হয় বাবাকে। বাঁশবেড়িয়ার নারায়ণতলায় পিসি নন্দন রোডের বাসিন্দা শুভঙ্করের বাবা সুব্রতবাবু রেশন দোকানে খাদ্যসামগ্রী মাপার কাজ করেন। মা দীপাদেবী গৃহবধূ। রেশন দোকানে কাজ করে যে আয় হয় তাতে এতদিন কোনওরকমে ছেলের পড়াশোনা টানলেও এখন কী করবেন তা নিয়ে ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না সুব্রতবাবু। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলের জন্য কোনও গৃহশিক্ষক দিতে পারেননি তিনি। নবম ও দশম শ্রেণিতে স্কুলের শিক্ষকেরা তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলে জানায় শুভঙ্কর। উচ্চ মাধ্যমিকেও বই কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু শুভঙ্করের চিন্তা অন্য, বই ছাড়াও পড়ার অন্যান্য খরচ রয়েছে। তা জোগাবে কে?
স্কুলের শিক্ষক রতন বাড়ুই, তরুণকান্তি কুমারের কথায়, ‘‘শুভঙ্কর খুবই মেধাবী। ভীষণ বিনয়ীও। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ও দুর্দান্ত ফল করেছে। ভবিষ্যতে পড়াশোনা চালাতে ওর যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য যতটুকু সম্ভব আমরা করব।’’