Advertisement
E-Paper

তাড়া করে চোর ধরালেন মা-মেয়ে

চুরির নেশায় খেয়াল ছিল না কতটা সময় পেরিয়েছে। ততক্ষণে ফ্ল্যাটে হাজির গৃহকর্ত্রী ও তাঁর মেয়ে। এ দিকে, দুই চোর তখনও লকার ভেঙে গয়না বার করতে ব্যস্ত। তা দেখে কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন গৃহকর্ত্রী। তবে দ্রুত ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:২৬
‘ওই চোর’। গাড়ির পিছনের সিটে বসা ধৃতকে দেখিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন সুলতাদেবী। সোমবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

‘ওই চোর’। গাড়ির পিছনের সিটে বসা ধৃতকে দেখিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন সুলতাদেবী। সোমবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

চুরির নেশায় খেয়াল ছিল না কতটা সময় পেরিয়েছে। ততক্ষণে ফ্ল্যাটে হাজির গৃহকর্ত্রী ও তাঁর মেয়ে। এ দিকে, দুই চোর তখনও লকার ভেঙে গয়না বার করতে ব্যস্ত।

তা দেখে কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন গৃহকর্ত্রী। তবে দ্রুত ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন। বিপদ বুঝে গৃহকর্ত্রী ও তাঁর মেয়েকে ধাক্কা মেরে ফেলে সিঁড়ি দিয়ে রাস্তায় নেমে পালানোর চেষ্টাও করেছিল চোরেরা। কিন্তু চটপট উঠে পড়ে দুই দুষ্কৃতীকে তাড়া করেছিলেন মা-মেয়ে। শেষে তাঁদের চেষ্টাতেই ‌ধরা পড়ে যায় এক চোর। আর এক জন তখনকার মতো পালালেও কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। দু’জনের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল চুরি যাওয়া সোনার গয়নার বেশির ভাগটাই।

সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার নিউ সিআইটি রোডে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের আবাসনে। যে আবাসনটি সিপিটি কোয়ার্টার নামে পরিচিত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, জিআর রোডের পাশে হাওড়া ব্রিজের ঠিক বাঁ দিকে ওই আবাসনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাট কিছুক্ষণের জন্য ফাঁকা পেয়ে তালা ভেঙে দুই চোর ঢুকে পড়ে। ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মী ও বর্তমানে খিদিরপুর ডকের কর্মী জয়দত্ত বড়ুয়ার স্ত্রী সুলতাদেবী তখন মেয়ে সৌদীপ্তাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। কলকাতায় কাজ থাকায় ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে দুপুর আড়াইটে নাগাদ বেরিয়ে যান সদ্য স্নাতক হওয়া ছেলে সৌরদীপও। পুলিশ জানায়, তক্কে-তক্কে থাকা দুই চোর এর পরেই সম্ভবত ওই ফ্ল্যাটে হানা দেয়।

সন্ধ্যায় ফ্ল্যাটে বসে সুলতাদেবী জানান, মেয়েকে নিয়ে তিনি ফেরেন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ। আবাসনে ঢোকার পরে নীচ থেকেই দেখতে পান তাঁদের ঘরে আলো জ্বলছে। বেশ অবাক হয়েই তিনতলায় নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে মা ও মেয়ে চমকে ওঠেন। দেখেন, ভাঙা তালা দরজায় ঝুলছে। ভেজানো দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই স্তম্ভিত হয়ে যান। সুতপাদেবী বলেন, ‘‘দেখি, ঘরের সব জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড। দু’টো ছেলে আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে লকার ভেঙে সব গয়না পকেটে পুরছে। এই দৃশ্য দেখে আমি চোর চোর বলে চিৎকার করে ওদের দিকে এগিয়ে যাই। কিন্তু ওরা দু’জন আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। উঠে পড়ে আমরা তাড়া করি। তখন দেখি, উল্টো দিক থেকে মোটরবাইকে এক জন ট্রাফিক পুলিশের অফিসার আসছেন। আমার মেয়ে চিৎকার করে তাঁকে ওই যুবকদের ধরতে বলে। আমিও সমানে চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকি। শেষে ওই পুলিশ অফিসার ও এলাকাবাসীরা জড়ো হয়ে এক জনকে ধরে ফেলেন। আর এক জন পালিয়ে যায়।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ধরা পড়ার পরে আবাসনের বাসিন্দারা ওই যুবককে উত্তম-মধ্যম দিয়ে গোলাবাড়ি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ধৃতকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য চোরকেও কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সুলতাদেবী জানান, চোরেরা তাঁর সব সোনার গয়নাই চুরি করে নিয়েছিল। খোয়া যাওয়া গয়নার অধিকাংশ অবশ্য উদ্ধার হয়েছে। শুধু একটি হার ও একজোড়া কানের দুল মেলেনি। ঘটনার পরে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘টিভিতে দেখে বা কাগজে পড়ে জানতে পারতাম মেয়েরা চোর বা ছিনতাইবাজ ধরেছে। এখন নিজেই এক জন দুষ্কৃতীকে ধরতে পেরেছি বলে খুব ভাল লাগছে।’’

new cit road howrah golabari mother daughter cayght thief golabari theif mother daughter theif
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy