Advertisement
E-Paper

ডাম্পারে পিষ্ট মা, জখম ছেলে, মগরায় বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশের গাড়িতে আগুন

মৃত অর্চনা সরকার (৩০) চুঁচুড়ার কেষ্টপুরের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর ছেলে সৌম্যজিৎ বাঁশবেড়িয়ার খামারপাড়া মধুকুণ্ডু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। তাকে মগরা ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০২:২২
রোষ: মগরার জিটি রোডের মিঠাপুকুর মোড়ে পুড়ছে গাড়ি, মৃতা অর্চনা সরকার (ইনসেটে)। ছবি: সুশান্ত সরকার

রোষ: মগরার জিটি রোডের মিঠাপুকুর মোড়ে পুড়ছে গাড়ি, মৃতা অর্চনা সরকার (ইনসেটে)। ছবি: সুশান্ত সরকার

আট বছরের ছেলেকে স্কুটিতে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃ্ত্যু হল এক মহিলার। গুরুতর জখম হয়েছে বালকটি। শনিবার সকালে এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে তেতে ওঠে মগরার জিটি রোডের মিঠাপুকুর মোড়। ওই রাস্তায় ‘হাম্প’ এবং ট্র্যাফিক পুলিশ না-থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, এই অভিযোগে এলাকাবাসী মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ গিয়ে সেই বিক্ষোভের মুখে পড়ে। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শেষে জেলা পুলিশের কর্তারা বড় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মৃত অর্চনা সরকার (৩০) চুঁচুড়ার কেষ্টপুরের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর ছেলে সৌম্যজিৎ বাঁশবেড়িয়ার খামারপাড়া মধুকুণ্ডু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। তাকে মগরা ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির মাথা, হাত এবং বুকে গুরুতর চোট রয়েছে। তার মাথায় ‘স্ক্যান’ করা হয়েছে। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা বলেন, ‘‘ডাম্পারটি আটক করা হয়েছে। চালক পলাতক। তার খোঁজ চলছে। ওই রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কারা পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগাল তা চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আট জনকে আটক করা হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ওই মোড়ে স্থায়ী ভাবে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েনের চিন্তাভাবনা হচ্ছে। ‘হাম্প’ তৈরির জন্য নির্দিষ্ট দফতরে জানানো হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌম্যজিৎ প্রতিদিন স্কুলের গাড়িতেই যায়। কিন্তু এ দিন অর্চনা ছেলেকে পৌঁছতে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মিঠাপুকুর মোড়ে ডাম্পারটির সঙ্গে অর্চনার স্কুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। অর্চনার মাথায় হেলমেট ছিল। কিন্তু ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। সৌম্যজিৎ ছিটকে পড়ে।

এরপরেই এলাকার লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মগরা থানা থেকে পুলিশ গিয়ে সেই বিক্ষোভের মুখে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড়ে (একদিকে আদি সপ্তগ্রাম স্টেশন, উল্টো দিকে বাঁশবেড়িয়া যাওয়ার রাস্তা, একদিকে মগরা থানা, অন্যদিকে চুঁচুড়া যাওয়ার পথ) প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। বহু মানুষ জখম হচ্ছেন। এ বার প্রাণহানিও হল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। রাস্তায় না-আছে ‘হাম্প’, না ট্র্যাফিক পুলিশ। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলে। পুলিশ এ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দু’পক্ষের বচসা শুরু হয়। তারপরেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। পরিস্থিতি তেতে ওঠায় ঘটনাস্থলে বাহিনী নিয়ে যান জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের ডিএসপি (অপরাধ) শুভাশিস চৌধুরী, সিআই (মগরা) অরূপ ভৌমিক এবং বলাগড় ও পান্ডুয়া থানার ওসি-রা। বিক্ষোভকারীরা তখন চলে যায়। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়।

মৃত অর্চনার স্বামী সুকুমার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের স্কুলে আজ ক্লাস ছিল না। পরীক্ষার খাতা দেখানোর কথা ছিল। স্কুলের গাড়িতে না-পাঠিয়ে অর্চনাই ওকে নিয়ে যাচ্ছিল। কী যে হয়ে গেল! পুলিশ দুর্ঘটনার তদন্ত করুক।’’ পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের নিন্দা করেছেন সৌম্যজিতের জ্যাঠামশাই বিশ্বজিৎবাবু।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy