Advertisement
E-Paper

আইন বদলে পুর ভাঁড়ারে টান হাওড়ায়

কলকাতা পুরসভার মতো হাওড়া পুরসভাও বেআইনি নির্মাণের উপরে জরিমানা আদায় করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছিল।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১২:৪০

যে আইনের ফাঁক গলে এত দিন কোষাগার ভরে উঠছিল হাওড়া পুরসভার, সেই আইনের সংশোধনই কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছে সমস্ত উন্নয়নের গতি!

কলকাতা পুরসভার মতো হাওড়া পুরসভাও বেআইনি নির্মাণের উপরে জরিমানা আদায় করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছিল। মূলত সেই আয়ের ভরসাতেই শুরু হয়েছিল উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প। প্রায় দশ হাজার বেকার যুবককে চাকরিও দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই আইনের সামান্য সংশোধন করতেই চরম বিপাকে পড়েছে তৃণমূল পুর বোর্ড। কারণ, সংশোধিত আইনের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেআইনি নির্মাণের উপরে জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া। যার ফলে রাজস্ব আদায় প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে ।

হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি নির্মাণের উপরে জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়ায় আইনি সিলমোহর প্রথম পড়ে বামফ্রন্টের আমলে। কলকাতা পুরসভায় আইন হিসেবে এই প্রথা চালু হওয়ার পরে হাওড়া পুরসভাতেও তা পুরোমাত্রায় শুরু হয়ে যায়। তাই গত কয়েক বছর ধরেই বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে মেয়র পারিষদদের অনুমতিক্রমে জরিমানা (রিটেনশন ফাইন) নিয়ে পুরসভার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছিল। যেমন, গত ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে শুধু এই খাতেই পুরসভায় আয় হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে হাওড়া পুর আইনের দু’টি ধারার সংশোধন করার পরেই বিপাকে পড়েন পুরকর্তারা। ১৯ জানুয়ারি গেজেট-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, সংশোধিত পুর আইনের ১৭৭ ধারা অনুযায়ী এখন থেকে বেআইনি নির্মাণের আলোচনায় মেয়র পারিষদদের কোনও ভূমিকা থাকবে না এবং কম বিচ্যুতির ক্ষেত্রে অনুমোদন দেবেন পুর কমিশনার। অর্থাৎ, বেআইনি বাড়ির ক্ষেত্রে সব ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয় পুর কমিশনারের হাতে।

যদিও হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘গেজেট-বিজ্ঞপ্তির পরে বেআইনি নির্মাণের উপরে জরিমানা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে নির্মাণের বিচ্যুতি কতটা হলে কম বিচ্যুতি ধরা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে পুরসভার অফিসিয়াল জেনারেল মিটিং বা ওজি মিটিং-এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

আইনের সংশোধনের ফলেই যে বর্তমানে হাওড়া পুরসভার ভাঁড়ারে টান পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য। গত মাসেই ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত থেকে ৯ কোটি টাকা তুলে ১০ হাজার অস্থায়ী কর্মীকে বেতন দেওয়া হয়েছে। তা থেকেই উন্নয়নের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে বরো অফিসগুলিতে। কিন্তু তার পরেও অর্থাভাব মেটেনি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থাভাব এখন এতটাই তীব্র যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের সৌন্দর্যায়ন-সহ উন্নয়নের বিভিন্ন কাজ বন্ধ হওয়ার মুখে। তার মধ্যে রয়েছে ইন্ডোর স্টেডিয়াম ও শরৎ সদন চত্বরে তারামণ্ডল তৈরি, বেজপুকুরে আন্তর্জাতিক মানের সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, ডিউক রোডে বালগঙ্গাধর তিলক পার্ক এবং বেলিলিয়াস পার্কে আইফেল টাওয়ারের মতো উঁচু মিনার তৈরির কাজ।

সব থেকে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে দশ হাজার অস্থায়ী কর্মীর ভবিষ্যৎ নিয়ে। এত কর্মীকে শুধু বেতন দিতেই মাসে লাগে প্রায় দু’কোটি টাকা। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এত কর্মী নেওয়ার কি কোনও প্রয়োজন ছিল? কোন আয়ের উপরে নির্ভর করে এত অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল?

হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরেই আমরা প্রত্যেকটি দফতরের আয় বাড়িয়েছি। আয় বেড়েছে বলেই বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরি দিয়েছি। তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রয়োজনে আরও বেকারদের চাকরি দেওয়া হবে। অর্থাভাব হলেও সাময়িক।’’

Howrah Municipality development law amendment Howrah Municipality Corporation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy